বিশ্ব

চুক্তি ছাড়াই শেষ হলো ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক

Advertisement

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বহুল আলোচিত বৈঠক শেষ হলো কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছাড়াই। তবে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের এই সাক্ষাৎকারকে উভয় পক্ষই “ইতিবাচক” আখ্যা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে এখন প্রশ্ন উঠছে—এই বৈঠক কি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথে নতুন অধ্যায় সূচনা করল?

বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে মার্কিন অঙ্গরাজ্য আলাস্কার অ্যাঙ্করেজ সামরিক ঘাঁটিতে, যেখানে নিরাপত্তা জোরদার ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বৈঠকে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনার মূল বিষয়বস্তু

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন—

“আমরা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ইস্যুতে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। তবে আমরা একটি ভালো সম্ভাবনার দরজা খুলেছি।”

পুতিনও একই সুরে বলেন—

“আলোচনায় যেসব বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, তা থেকে যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়ার সম্পর্কের পুনরুদ্ধার সম্ভব হতে পারে। একইসঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার পথও তৈরি হতে পারে।”

তবে স্পষ্টভাবে ঠিক কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা দুই পক্ষের কেউই প্রকাশ করেননি।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক?

এটি ছিল ট্রাম্প ও পুতিনের সপ্তম মুখোমুখি বৈঠক। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ইউক্রেন যুদ্ধ, যা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সংঘাত অব্যাহত রয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি, জ্বালানি বাজার ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুরু থেকেই ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে আসছে, আর রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তা স্বার্থ ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করার জন্য। ফলে এই দুই পরাশক্তির সরাসরি বৈঠককে অনেকে শান্তির সম্ভাবনার আলো হিসেবে দেখছেন।

কারা ছিলেন বৈঠকে?

এই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা—

  • যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে:
    • পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও
    • বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ
  • রাশিয়ার পক্ষ থেকে:
    • পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ
    • পুতিনের সহকারী ও মুখপাত্র ইউরি উশাকভ

বিশ্লেষকদের মতে, উভয় দেশের মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের উপস্থিতি দেখায় যে, আলোচনাটি শুধুমাত্র কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং গুরুতর রাজনৈতিক ও কৌশলগত বিষয় নিয়েই হয়েছে।

আলোচনায় কোন কোন বিষয় উঠে এসেছে?

যদিও আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি, তবুও বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় এসেছে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আলোচনায় উঠে এসেছে—

  1. ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ
    • যুদ্ধবিরতি সম্ভাবনা
    • শান্তিচুক্তির শর্তাবলী
    • ন্যাটোর ভূমিকা
  2. অর্থনৈতিক সম্পর্ক
    • দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর সম্ভাবনা
    • জ্বালানি বাজারে সহযোগিতা
  3. নিরাপত্তা ও সামরিক বিষয়
    • পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ
    • সামরিক মহড়া ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
  4. গ্লোবাল ইস্যু
    • মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা
    • চীনের প্রভাব ও অবস্থান

ট্রাম্প–পুতিন সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

ট্রাম্প ও পুতিনের সম্পর্ক সবসময় আলোচনায় থেকেছে। ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনের পর থেকেই ট্রাম্পের ওপর অভিযোগ ছিল যে তিনি রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব পোষণ করেন। তবে ট্রাম্প বরাবরই বলেছেন, “রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলে যুক্তরাষ্ট্রেরই লাভ।”

২০২৫ সালে আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প চেষ্টা করছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে। অন্যদিকে পুতিন দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপের মুখে রয়েছেন। ফলে উভয়ের স্বার্থই আংশিকভাবে মিলেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলছে, বৈঠক ইতিবাচক হলেও ইউক্রেনের স্বার্থ যেন অবহেলিত না হয়।
  • চীন এই বৈঠককে “বিশ্বশান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেছে।
  • ন্যাটো জানায়, তারা ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে, তবে কূটনৈতিক সমাধানকে স্বাগত জানাবে।

বিশ্লেষকদের মতামত

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন—

  • বৈঠকটি একটি “আইস ব্রেকার” (বরফ গলানোর উদ্যোগ)।
  • রাশিয়া চায় যুদ্ধের কারণে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হোক।
  • যুক্তরাষ্ট্র চায় বৈশ্বিক জ্বালানি ও নিরাপত্তা বাজার স্থিতিশীল হোক।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, কোনো লিখিত চুক্তি ছাড়া এমন বৈঠকের ফল দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।

ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া

ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে—
“আমরা আশা করি আলোচনায় ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অবশ্যই আমাদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে।”

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

যদিও চুক্তি হয়নি, তবে বৈঠক শেষে আশা জেগেছে। দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা হলেও উন্নতির দিকে যেতে পারে। যদি সত্যিই কোনো মধ্যপথ বের হয়, তবে তা শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক চুক্তি ছাড়াই শেষ হলেও এটি একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছে। বিশ্ববাসী এখন অপেক্ষা করছে—এই আলোচনার ফসল কীভাবে বাস্তবে রূপ নেয়।

একজন বিশ্লেষকের ভাষায়—

“শান্তি হয়তো রাতারাতি আসবে না, তবে আলোচনার টেবিলই শান্তির প্রথম ধাপ।”

MAH – 12336 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button