প্রযুক্তি

চিপ-মোডেম একসঙ্গে করার পরিকল্পনা করছে অ্যাপল

অ্যাপল প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসছে। এবার প্রতিষ্ঠানটি তাদের চিপ ও মোডেমকে একত্রিত করার পরিকল্পনা করছে, যা স্মার্টফোনের শক্তি ও ব্যাটারি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

নতুন প্রযুক্তির দিকে অ্যাপলের অগ্রগতি

গত সপ্তাহে অ্যাপল প্রথমবারের মতো নিজেদের তৈরি ইন-হাউস ‘সি১’ নামের সেলুলার মোডেম বাজারে আনে। এই মোডেমটি ‘আইফোন ১৬ই’ মডেলে ব্যবহার করা হয়েছে, যা অ্যাপলের সাশ্রয়ী মূল্যের একটি স্মার্টফোন। নতুন এই প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অ্যাপলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় এটি একটি বড় পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে।

প্রযুক্তি বিষয়ক জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ‘এনগ্যাজেট’-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অ্যাপলের এই নতুন মোডেম নিয়ে তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। তারা ভবিষ্যতে এটিকে স্মার্টফোনের মূল চিপের সঙ্গে সংযুক্ত করে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর একটি প্রযুক্তি তৈরি করতে চায়।

চিপ ও মোডেম একীভূত করার সম্ভাবনা

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “অ্যাপল শেষ পর্যন্ত এ মোডেমটিকে মূল প্রসেসর বা চিপের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।” এই পরিকল্পনা সফল হলে আইফোনের কার্যক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাটারির ব্যাকআপ দীর্ঘস্থায়ী হবে।

চিপ ও মোডেম একত্রিত হলে ডিভাইসের শক্তি সাশ্রয় হবে, কারণ আলাদা আলাদা ইউনিট হিসেবে কাজ না করে, একটি একক ইউনিট হিসেবে কাজ করবে। এতে ব্যাটারি খরচ কমে আসবে এবং ডিভাইস আরও কার্যকর হবে। যদিও এখনো এর চূড়ান্ত ডিজাইন তৈরি করেনি কুপারটিনোভিত্তিক কোম্পানিটি, তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে, এটি স্মার্টফোন বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে।

‘সি২’ ও ‘সি৩’ মোডেমের ভবিষ্যৎ

বর্তমানে অ্যাপল ‘সি২’ ও ‘সি৩’ নামের মোডেম তৈরির কাজ করছে। তবে এগুলো কেবল আলাদা মোডেম হিসেবেই বাজারে আসবে। অ্যাপল ইতিমধ্যেই এসব মোডেম নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপল সম্ভবত ২০২৮ সালের আগে চিপ-মোডেম একীভূত করার ডিজাইন চূড়ান্ত করবে না।

আইফোন ১৬ই ও নতুন মোডেমের কার্যকারিতা

অ্যাপলের নতুন ‘সি১’ মোডেমের প্রথম ব্যবহার হয়েছে ‘আইফোন ১৬ই’-তে। এটি ‘আইফোনের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মোডেম’ হিসেবে পরিচিত। এতে রয়েছে অ্যাপলের নিজস্ব ‘এ১৮’ চিপ, যা চারটি জিপিইউ কোর সমৃদ্ধ এবং কোম্পানির নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ সমর্থন করে।

আইফোন ১৬ই-এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯৯ ডলার, যা তুলনামূলকভাবে একটি সাশ্রয়ী মডেল। এতে উন্নত ব্যাটারি পারফরম্যান্স এবং শক্তিশালী প্রসেসর থাকায় ব্যবহারকারীরা এটি থেকে ভালো পারফরম্যান্স আশা করতে পারেন।

কেন অ্যাপল নিজস্ব মোডেম তৈরি করছে?

অ্যাপল দীর্ঘদিন ধরে কোয়ালকমের তৈরি মোডেম ব্যবহার করত। তবে নিজেদের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব মোডেম তৈরি শুরু করেছে।

এতে কয়েকটি প্রধান সুবিধা রয়েছে:

  1. বিদ্যুৎ সাশ্রয়: ইন-হাউস মোডেম ডিজাইন করা হলে চিপের সঙ্গে আরও কার্যকর সমন্বয় করা সম্ভব হয়, যা বিদ্যুৎ খরচ কমায়।
  2. পারফরম্যান্স উন্নয়ন: নিজস্ব মোডেম তৈরি করলে অ্যাপল ডিভাইসের জন্য সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে পারবে।
  3. স্বাধীনতা বৃদ্ধি: কোয়ালকমের মতো তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারবে, যা কোম্পানির ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

চিপ-মোডেম প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিপ-মোডেম একীভূত করার প্রযুক্তি স্মার্টফোন শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে পারে। এটি কেবল আইফোনের জন্য নয়, বরং অন্যান্য অ্যাপল ডিভাইস যেমন আইপ্যাড ও ম্যাকবুকের জন্যও উপকারী হতে পারে।

তবে এই নতুন প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করতে অ্যাপলকে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে:

  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: চিপ ও মোডেম একত্রিত হলে বেশি তাপ উৎপন্ন হতে পারে, যা ডিভাইসের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • নেটওয়ার্ক সামঞ্জস্যতা: নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরের নেটওয়ার্ক সিস্টেমের সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
  • উন্নত ব্যাটারি প্রযুক্তি: অধিক শক্তি সাশ্রয়ের জন্য আরও উন্নত ব্যাটারি প্রযুক্তির প্রয়োজন হতে পারে।

উপসংহার

অ্যাপলের চিপ-মোডেম একত্রিত করার পরিকল্পনা প্রযুক্তি জগতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। যদিও এটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি সফল হলে ভবিষ্যতে স্মার্টফোন শিল্পে নতুন একটি ধারা তৈরি হবে।

‘আইফোন ১৬ই’-তে ‘সি১’ মোডেম ব্যবহার করে অ্যাপল ইতিমধ্যে তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী কয়েক বছরে কোম্পানিটি কীভাবে এই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য কী নতুন সুযোগ নিয়ে আসে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button