ভারতের ছাড়া পানিতে বন্যা, বাঁধ উড়িয়ে দিলো পাকিস্তান

ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে জরুরি অবস্থা। বাঁধ উড়িয়ে নদীর পানি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
ভারতে ভারি বৃষ্টিপাত, পাকিস্তানে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি
পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে তিনটি আন্তর্জাতিক নদী—চেনাব, রাভি এবং শতদ্রু—অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এই নদীগুলোতে পানি উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে। ফলে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের জনবহুল এলাকা বন্যার সতর্কতায় রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদীর তীব্র স্রোত এবং বাঁধের ওপর চাপ বাড়ায় কাদিরাবাদ বাঁধের একটি অংশে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ করা হয়েছে, যাতে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
বাঁধ উড়িয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
পাঞ্জাব প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র মাজহার হুসেন জানিয়েছেন, “কাঠামোটি বাঁচাতে আমরা ডান প্রান্তিক বাঁধটি ভেঙে দিয়েছি, যাতে পানির চাপ কমে এবং জনবসতি এলাকা নিরাপদ থাকে।”
উল্লেখ্য, চেনাব নদীর তীরে শিখদের অন্যতম পবিত্র স্থান কর্তারপুর মন্দিরও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে আটকে পড়া শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করার জন্য পাঁচটি নৌকা পাঠানো হয়েছে।
সেনা মোতায়েন এবং স্থানান্তর
দুর্যোগ মোকাবিলায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রায় দুই লাখ দশ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে। গবাদি পশুদেরও নিরাপদ স্থানান্তর করা হচ্ছে। সরকার সংশ্লিষ্ট এলাকার নিরাপত্তা ও ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করছে।
ভারতের পানি ছাড়া ও বন্যার ইতিহাস
প্রতিবেশী দেশ ভারতের উজানের বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার কারণে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়া নতুন নয়। অতীতে এই ধরনের পরিস্থিতি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে নিয়মিতভাবে ঘটেছে, যা জনজীবন ও কৃষি ক্ষেত্রে বিশাল ক্ষতি করেছে।
বন্যা পরিস্থিতিতে পূর্বে শতাধিক মৃত্যু এবং ব্যাপক আর্থ-সামাজিক ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। তাই সরকারি ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সর্বদা সতর্ক অবস্থানে থাকে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
পাঞ্জাব প্রদেশের নাগরিক ও কৃষকরা বন্যার কারণে সরাসরি ক্ষতির মুখে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এলাকা থেকে দ্রুত স্থানান্তরিত না হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোর জানিয়েছে, ভারত সীমান্তের বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার আগে পাকিস্তানকে নোটিশ দিয়েছিল। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন হঠাৎ বন্যার ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন হতে পারে। তাই পাকিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর এবং পূর্বাভাসযোগ্য করা জরুরি।
সরকারি পদক্ষেপ এবং উদ্ধার কাজ
পাঞ্জাব প্রদেশের প্রাদেশিক দুর্যোগ প্রধান ইরফান আলী জানিয়েছেন, বন্যার ঢেউ রাত এবং পরের দিন সকালে লাহোরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করবে। ইতিমধ্যে সেনা এবং স্থানীয় প্রশাসন জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করছে এবং ত্রাণ বিতরণ করছে।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক এবং সেনাবাহিনী বন্যার পানিতে আটকে থাকা মানুষ ও গবাদি পশুদের উদ্ধারে ব্যস্ত। কর্তারপুর মন্দির এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বন্যার ঘটনা কূটনৈতিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জলসম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ এবং সমঝোতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্যা মোকাবিলার জন্য পূর্বসতর্কতা, বাঁধের নিয়ন্ত্রণ এবং জনসাধারণের দ্রুত স্থানান্তরই সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমন ঘটনা আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে, তাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সমাপ্তি
ভারতীয় সীমান্তের ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বন্যার পরিস্থিতি ক্রমশ সংকটময়। সরকারি ত্রাণ, সেনা মোতায়েন এবং স্থানান্তরের মাধ্যমে প্রভাবিত জনগণকে নিরাপদ স্থানে আনা হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নয়ন ও পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দিনরাত কাজ করছে।
এম আর এম – ১০৭৫, Signalbd.com