ভুটানে চালু হলো স্টারলিংক, বাংলাদেশে আসতে পারে এ বছরই

ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা এখন ভুটানে চালু হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক্স (পূর্বে টুইটার) প্ল্যাটফর্মে স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক এই তথ্য নিশ্চিত করেন। নতুন আপডেট অনুযায়ী, ভুটানের ব্যবহারকারীরা এখন থেকে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বিস্তৃত করতে স্টারলিংক কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মঙ্গোলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই সেবা চালু রয়েছে। তবে ভারতে স্টারলিংক কার্যক্রম শুরুর জন্য এখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। মিয়ানমারে কবে নাগাদ এটি চালু হবে, তা অনিশ্চিত থাকলেও বাংলাদেশে এ বছরই স্টারলিংক ইন্টারনেট চালুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ভুটানে স্টারলিংকের সেবা ও খরচ
স্টারলিংক মূলত বিশেষ স্যাটেলাইট টার্মিনালের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। তবে এটি সরাসরি মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা যাবে না। নির্দিষ্ট কিছু দেশে আইফোন ব্যবহারকারীরা স্যাটেলাইট-নির্ভর সংযোগ পাচ্ছেন, তবে ভুটানে এই সুবিধা নেই। দেশটির তথ্য বিভাগ জানায়, ‘রেসিডেনশিয়াল লাইট’ প্ল্যানে প্রতি মাসে তিন হাজার গুলট্রাম (প্রায় ৪০০০ টাকা) খরচ হবে, যা ২৩ এমবিপিএস থেকে ১০০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করবে। অন্যদিকে, ‘স্ট্যান্ডার্ড রেসিডেনশিয়াল’ প্ল্যানে মাসিক ৪২০০ গুলট্রাম (প্রায় ৫৫০০ টাকা) খরচ হবে, যা ২৫ এমবিপিএস থেকে ১১০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করবে এবং এতে ‘আনলিমিটেড ডেটা’ ব্যবহারের সুবিধা থাকবে।
বাংলাদেশে স্টারলিংক কবে আসছে?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’ জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালু হতে পারে এ বছরেই। তবে সরকারের অনুমোদন ও স্থানীয় টেলিকম নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। স্টারলিংক স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেট সেবা স্থানীয় টেলিকম অপারেটরদের তুলনায় ব্যয়বহুল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রথমদিকে এই সেবার খরচ তুলনামূলক বেশি থাকবে, যা ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে কমতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
স্টারলিংকের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে স্টারলিংকের আগমন ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ব্রডব্যান্ড বা ফাইবার অপটিক সংযোগ পৌঁছানো কঠিন, সেখানে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই সেবা চালু করতে হলে স্থানীয় টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে সমন্বয় এবং সরকারি নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে হবে। এছাড়া, স্টারলিংকের উচ্চ খরচ সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রাথমিকভাবে উচ্চ আয়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো এই সেবা গ্রহণ করলেও ভবিষ্যতে খরচ কমলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এর ব্যবহার বাড়তে পারে।
স্টারলিংকের বৈশ্বিক প্রসার
স্টারলিংক ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফলভাবে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিকাঠামো দুর্বল, সেখানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেট সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভুটানে স্টারলিংকের সফল চালু এই সেবার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশেও স্টারলিংকের সফল চালু হলে ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।
সরকারি অনুমোদন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু করতে হলে সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। এছাড়া, স্থানীয় টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্টারলিংকের সেবা চালু হলে বাংলাদেশের ইন্টারনেট পরিষেবার মান ও গতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। তবে এই সেবা চালু করতে হলে প্রাথমিকভাবে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, যার মধ্যে খরচ ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা অন্যতম।
উপসংহার
স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ভুটানে সফলভাবে চালু হওয়ার পর বাংলাদেশেও এই সেবা চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই সেবা চালু করতে হলে সরকারি অনুমোদন ও স্থানীয় টেলিকম নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে হবে। স্টারলিংকের সফল চালু হলে বাংলাদেশের ইন্টারনেট পরিষেবার মান ও গতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।