জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আজ নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বের ৭৫টিরও বেশি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের জন্য স্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে মঙ্গলবার রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময়) এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য দেবেন।
রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিক গুরুত্ব
সরকারের একজন কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা কেবল বাংলাদেশের নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন, মানবিক সহায়তা, এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
“এই সম্মেলন রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা সংগ্রহ করার একটি বড় সুযোগ,” কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, “বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতি এবং প্রতিশ্রুতি রোহিঙ্গাদের জন্য ভবিষ্যতের আশা জাগাবে।”
সম্মেলনের মূল আলোচ্যসূচি
সম্মেলনে মূলত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে:
- রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন: বিশেষ করে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদভাবে ফেরানোর প্রক্রিয়া।
- মানবিক সহায়তা ও অর্থায়ন: দাতা দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
- শরণার্থী জীবনমান উন্নয়ন: বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পুনর্বাসন।
- আন্তর্জাতিক সমন্বয়: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা।
- দীর্ঘমেয়াদি সমাধান: রাজনৈতিক ও সামাজিক সমাধানের মাধ্যমে স্থায়ী নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধানে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
অংশগ্রহণকারী দেশ ও সংস্থা
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশের মধ্যে রয়েছে:
- যুক্তরাষ্ট্র
- যুক্তরাজ্য
- কানাডা
- জার্মানি
- ফ্রান্স
- জাপান
- দক্ষিণ কোরিয়া
- ভারত
- চীন
- বাংলাদেশ
তাছাড়া, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যেমন UNHCR, UNICEF, WHO এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
এতে অংশগ্রহণকারী দেশ ও সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেবে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবনা ও অংশগ্রহণ
বাংলাদেশ সরকারও এই সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গাদের জন্য অতিরিক্ত সাহায্য, অর্থায়ন, এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাবে।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সমন্বয় অপরিহার্য।
কক্সবাজার সম্মেলনের প্রেক্ষাপট
উল্লেখযোগ্য, গত ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে ‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করা হয়।
কক্সবাজারের সম্মেলনটি জাতিসংঘের বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গণ্য হয়। এতে রোহিঙ্গা সমস্যা, মানবিক সহায়তা, প্রত্যাবাসন, এবং পুনর্বাসনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বার্তাটি স্পষ্ট ছিল: রোহিঙ্গাদের জন্য দ্রুত এবং স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি
রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে। তারা প্রধানত কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
শরণার্থীদের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, এবং সামাজিক পুনর্বাসন এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে, শীত, বর্ষা, এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণে মানবিক সহায়তা অপরিহার্য।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং বিশ্বের দাতা দেশ ও সংস্থার সহায়তা না হলে, রোহিঙ্গাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব
রোহিঙ্গা সমস্যা কেবল একটি মানবিক সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক নীতি এবং মানবাধিকারের বিষয়ও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে:
- রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে
- আর্থিক ও মানবিক সহায়তা প্রদান করতে
- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং পুনর্বাসনের জন্য সমন্বয় করতে
- রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে স্থায়ী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে
অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সম্মেলন রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
প্রতিশ্রুতির প্রভাব
সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে যে:
- দাতা দেশগণ আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করবে
- আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও জীবনমান উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে
- বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সমন্বিতভাবে কাজ করবে
- বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এবং মানবিক সহায়তায় সহায়তা করবে
এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়িত হলে, রোহিঙ্গাদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নিশ্চিত হবে।
নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা সম্মেলনটি কেবল বাংলাদেশের নয়, বরং সমগ্র বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার, আন্তর্জাতিক সহায়তা সংগ্রহের, এবং রাজনৈতিক ও মানবিক উদ্যোগগুলো সমন্বিত করার একটি বড় সুযোগ।
বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রহণ এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে, রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্থিতিশীল ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
MAH – 13082 I Signalbd.com



