প্রযুক্তি

ভূমিকম্প শনাক্তে স্মার্টফোন: কীভাবে কাজ করবে, ব্যবহার পদ্ধতি

Advertisement

প্রযুক্তির বিশ্বে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে গুগল। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (USGS) এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যৌথভাবে গুগল এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যা ভূমিকম্প হওয়ার আগ মুহূর্তেই সতর্কবার্তা পাঠাতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের আগাম সতর্কবার্তা জানাতে পারে।

বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে এই সিস্টেম হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর মূল ধারণা হলো ভূমিকম্পের ধাক্কা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সতর্কবার্তা পাঠানো, যাতে মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারে, ট্রেনের বা গাড়ির গতি কমানো যায় বা জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

গুগলের ভূমিকম্প শনাক্তকরণ প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে?

গুগলের এই প্রযুক্তি মূলত দুইটি পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে:

  1. সিসমোমিটারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ:
    যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত হাজার হাজার সিসমোমিটার ভূমিকম্প সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও এর আশেপাশের অঞ্চলে ভূমিকম্পের আগাম শনাক্তকরণ করা সম্ভব।
  2. অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে সিসমোমিটার হিসেবে ব্যবহার:
    যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, অর্থাৎ পৃথিবীর বাকি অংশের জন্য গুগল অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে ব্যবহার করছে কম্পন শনাক্তের জন্য। আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে থাকা এক্সেলারোমিটার সেন্সর ফোনের নড়াচড়া এবং কম্পন শনাক্ত করতে পারে। সাধারণত এই সেন্সর ফিটনেস ট্র্যাকার বা পদক্ষেপ গণনার জন্য ব্যবহৃত হলেও, এটি ছোটোখাটো ভূমিকম্পও শনাক্ত করতে সক্ষম।

ফোন ব্যবহারকারী যতটুকু হাঁটছেন বা দৌড়াচ্ছেন, এই ধরনের তথ্যও সেন্সর শনাক্ত করতে পারে। যখন ফোনে ভূমিকম্পের প্রাথমিক ধাক্কা অনুভূত হয়, তখন সেই তথ্য গুগলের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেমে পাঠানো হয়।

সতর্কবার্তা পাঠানোর প্রক্রিয়া

১. ফোন থেকে তথ্য গুগলে পৌঁছায়।
২. একই এলাকার লক্ষ লক্ষ ফোন থেকে একই ধরনের কম্পনের তথ্য আসছে কিনা গুগল যাচাই করে।
৩. তথ্যের মিল থাকলে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সকল অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীর ফোনে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হয়। বিশেষত্ব হলো, রেডিও সিগন্যাল ভূমিকম্পের কম্পনের চেয়ে দ্রুত চলে, তাই দূরের অঞ্চলেও কম্পন অনুভূত হওয়ার আগেই সতর্কবার্তা পাঠানো সম্ভব।

গুগলের অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মার্ক স্টোগাইটিস বলেন,
“আমরা এখানে আলোর গতিবেগ এবং ভূমিকম্পের গতিবেগের মধ্যে প্রতিযোগিতা খেলি। সৌভাগ্য আমাদের যে, আলোর গতি ভূমিকম্পের চেয়ে অনেক দ্রুত।”

সতর্কবার্তায় সাধারণত বলা হয়: “ড্রপ, কাভার অ্যান্ড হোল্ড”, অর্থাৎ দ্রুত নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে থাকা।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ভূমিকম্প সতর্কবার্তা কিভাবে চালু করবেন?

১. ফোনের Settings অপশনে যান।
২. Safety & Emergency অপশনটি নির্বাচন করুন।
৩. এরপর Earthquake Alerts সিলেক্ট করুন।

সতর্কবার্তার সম্পূর্ণ সুবিধা পাওয়ার জন্য শর্তসমূহ:

  • ফোনের Location অন রাখতে হবে।
  • ফোনকে স্থিতিশীল স্থানে রাখতে হবে, যেমন টেবিলের ওপর।
  • ফোনকে চার্জারের সাথে সংযুক্ত রাখতে হবে।

এতে ফোন ভূমিকম্প শনাক্ত করে গুগলে তথ্য পাঠাতে পারে। যদি একই অঞ্চলের একাধিক ফোন একই ধরনের কম্পন শনাক্ত করে, গুগল বিশ্লেষণ করে সতর্কবার্তা পাঠায়।

প্রযুক্তির সুবিধা ও প্রভাব

  • জীবন রক্ষা: কয়েক সেকেন্ডের আগাম সতর্কবার্তা অনেক মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে।
  • দুর্যোগ প্রস্তুতি: ট্রেন, মেট্রো, কার, স্কুল বা অফিসগুলো দ্রুত নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে পারে।
  • গ্লোবাল স্কেল: এই প্রযুক্তি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বের যে কোনো স্থানে কার্যকর।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে এবং আরও দ্রুত ও নির্ভুল সতর্কবার্তা পাঠানো সম্ভব হবে।

অন্যান্য তথ্য ও গবেষণা

গুগল দীর্ঘদিন ধরে USGS এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করছে। এই প্রযুক্তি গবেষণার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দ্রুত সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া।

গবেষণায় দেখা গেছে, ফোনে থাকা সেন্সরগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল, এবং এটি ছোট ভূমিকম্পও শনাক্ত করতে পারে। তাই ভবিষ্যতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ভূমিকম্প পূর্বাভাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সারসংক্ষেপ

  • গুগল অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে ভূমিকম্প শনাক্ত করতে ব্যবহার করছে।
  • ফোনের এক্সেলারোমিটার সেন্সর কম্পন অনুভব করে।
  • একই অঞ্চলের ফোন থেকে তথ্য আসলে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়।
  • সতর্কবার্তা পাওয়ার জন্য ফোনের লোকেশন অন রাখতে হবে এবং স্থিতিশীল অবস্থায় চার্জে সংযুক্ত থাকতে হবে।
  • সতর্কবার্তা ব্যবহারকারীদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে সাহায্য করে।

এই প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি নতুন নিরাপত্তার স্তর যোগ করবে এবং বিপর্যয়ের সময় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।

MAH – 13941 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button