২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রায় ১.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত করছে। এই তথ্যটি বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটির ৫ম সভায় জানানো হয়েছে। সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিনিয়োগের উৎস ও পরিসংখ্যান
বিডা সূত্রে জানা গেছে, মোট ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৬৫ মিলিয়ন ডলার, স্থানীয় বিনিয়োগ ৭০০ মিলিয়ন ডলার এবং যৌথ বিনিয়োগ ৮৫ মিলিয়ন ডলার। বিশেষ করে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।
বিনিয়োগ রূপান্তরের হার ও সম্ভাবনা
মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের মধ্যে ২৩১ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা প্রায় ১৮% রূপান্তর হার নির্দেশ করে। বিশ্বজুড়ে রূপান্তরের গড় হার ১৫ থেকে ২০% হওয়ায় বাংলাদেশের এই হার সন্তোষজনক। বিডার প্রতিনিধি নাহিয়ান রহমান রচি জানান, বিডা শুধু পরিমাণ নয়, বরং বিনিয়োগের গুণগত মান ও স্থায়িত্বের ওপরও গুরুত্ব দেয়। যদি এই গতি বজায় থাকে এবং প্রক্রিয়া সহজ হয়, তবে পরবর্তী পাঁচ মাসে আরও ভালো ফলাফল আশা করা যায়।
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট নিরসন
বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট কমানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে বন্দরে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কনটেইনার দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। গত দুই মাসে ১,০০০ কনটেইনার নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। আগামী মাসে আরও ৫০০ কনটেইনার নিলামে তোলার কাজ চলছে। নিলামের পণ্য হস্তান্তরের কাজও চলমান রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিলাম কার্যক্রম আরও গতিশীল করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিজনেস পোর্টাল (বিবিপি) চালু
বৈঠকে বাংলাদেশ বিজনেস পোর্টাল (বিবিপি) চালু করার অগ্রগতি বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বিডা, বেজা, বেপজা ও বিসিকের পরিষেবাগুলোকে একত্রিত করতে এই সমন্বিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সফট লঞ্চিং এবং সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ পুরোদমে প্ল্যাটফর্মটি চালু হবে।
সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমান সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই হয়েছে, যার মধ্যে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে ব্যয় হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দর অবকাঠামো আধুনিকায়ন, জলবায়ু সহনশীল ব্রেকওয়াটার নির্মাণ এবং বড় জাহাজের জন্য প্রবাহ চ্যানেল তৈরি করা হবে। এছাড়া, ২০০ মিলিয়ন ডলার সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে ব্যয় হবে, যার মাধ্যমে ৪.৫ মিলিয়ন দরিদ্র জনগণের জন্য নগদ সহায়তা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এছাড়া, চট্টগ্রামে মনোরেল প্রকল্পের feasibility study শুরু হয়েছে, যা শহরের যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিকায়ন হবে।
বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশে এই ইতিবাচক পরিবর্তন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করছে। সরকারের নীতি সহায়তা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। যদি এই গতি বজায় থাকে, তবে বাংলাদেশ আগামী দিনে একটি প্রধান বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হতে পারে।
MAH – 12535 , Signalbd.com



