মসজিদে নববির খোলা প্রাঙ্গণে থাকা বিশাল স্বয়ংক্রিয় ছাতাগুলো শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং মুসল্লিদের আরাম এবং সুরক্ষার জন্য তৈরি। এই ছাতাগুলো আধুনিক স্থাপত্য এবং উচ্চ প্রযুক্তির মিলনের একটি অনন্য উদাহরণ, যা বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় স্থাপত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে নজিরবিহীন।
মসজিদে নববির ছাতাগুলো মূলত গরমের তীব্রতা এবং সূর্যের প্রখর আলো থেকে মুসল্লিদের রক্ষা করে। এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলা ও বন্ধ হয় এবং তাপমাত্রা, বাতাস এবং আলো অনুযায়ী কার্যকরভাবে সমন্বয় করে। গরমের সময় ছাতার নিচের তাপমাত্রা প্রায় ১০-১৫ ডিগ্রি কমে যায়, যা মুসল্লিদের জন্য আরামদায়ক নামাজের পরিবেশ তৈরি করে।
স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির সমন্বয়
ছাতাগুলোতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালে ছাতাগুলো খুলে যায় এবং ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া, বর্ষা বা ঝড়ের সময় পানি নিষ্কাশন এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মসজিদে নববির এই ছাতাগুলো আধুনিক স্থাপত্য ও প্রযুক্তির নিদর্শন। এগুলো ধর্মীয় স্থানের সৌন্দর্য এবং বাস্তব প্রয়োজনকে একত্রিত করেছে।
নকশা ও উপকরণ
ছাতাগুলো ডিজাইন করেছেন জার্মান স্থপতি মাহমুদ বোদো রাশ। প্রতিটি ছাতার উচ্চতা বন্ধ অবস্থায় প্রায় ২১.৭ মিটার এবং খোলা অবস্থায় ছায়া প্রদানের অংশ প্রায় ২৫.৫ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। প্রতিটি ছাতার ওজন প্রায় ৪০ টন।
উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে হালকা কিন্তু শক্তিশালী ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং বিশেষ ক্যানভাস। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ছাতাগুলো দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই করা হয়েছে।
ছাতাগুলোর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে প্রাকৃতিক বাতাস প্রবাহিত হয় এবং প্রাঙ্গণে তাজা বাতাসে নামাজ আদায় করা যায়। প্রতিটি ছাতার ভিত্তিতে ৪৩৬টি মিস্ট ফ্যান সংযুক্ত করা হয়েছে, যা বাতাসকে ঠান্ডা করে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে ২৪ ঘণ্টার ব্যাটারি ব্যাকআপে ছাতাগুলো চলতে সক্ষম।
প্রকল্পের ইতিহাস ও বিস্তার
মসজিদে নববির ছাতা প্রকল্পটি ২০১০ সালের আগস্টে সমাপ্ত হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২৫০টি ছাতা ইনস্টল করা হয়। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে আরও ১০০টি ছাতা যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি মসজিদ-প্রাঙ্গণে অনুরূপ ছাতা বসানো হয়েছে। এই প্রযুক্তি সৌদি আরব ছাড়াও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে ধর্মীয় প্রাঙ্গণগুলোর উন্নতিতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
ছাতার কার্যকারিতা ও সুবিধা
- উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ: গরমের সময় মুসল্লিদের ছায়া এবং তাজা বাতাসে নামাজ পড়ার সুবিধা।
- বৃষ্টি ও ঝড় প্রতিরোধ: স্বয়ংক্রিয় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা।
- শব্দ নিয়ন্ত্রণ: প্রার্থনার সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত।
- স্বয়ংক্রিয় খোলা-বন্ধ: তাপমাত্রা, বাতাস এবং আলো অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত।
- দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই: হালকা কিন্তু শক্তিশালী উপকরণ ব্যবহার।
- সৌন্দর্য বৃদ্ধি: মসজিদের প্রাঙ্গণকে এক অনন্য দৃশ্যমান রূপ প্রদান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মসজিদে নববির ছাতাগুলো শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং ধর্মীয় প্রাঙ্গণের কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও মুসল্লিদের আরামের প্রতীক। এগুলো আধুনিক স্থাপত্য, প্রযুক্তি এবং ইসলামের ঐতিহ্যের নিখুঁত মিলন।
অন্যান্য দেশ ও অনুরূপ ছাতা
মসজিদে নববির ছাতার প্রযুক্তি প্রভাব ফেলেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। মালয়েশিয়া, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ধর্মীয় প্রাঙ্গণে অনুরূপ স্বয়ংক্রিয় ছাতা বসানো হয়েছে। এই ছাতাগুলো মুসল্লিদের আরাম, সৌন্দর্য এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সক্ষম।
বিশ্বের বহু স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ বলছেন, মসজিদে নববির ছাতাগুলো ধর্মীয় স্থাপত্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি শুধু সৌন্দর্যের দিক থেকে নয়, বাস্তবিকভাবে মুসল্লিদের সুরক্ষা এবং আরামের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রযুক্তি ও বৈশিষ্ট্য
- সেন্সর ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় খোলা-বন্ধ: তাপমাত্রা, বাতাস এবং আলো অনুযায়ী।
- বাতাসের দিক পরিবর্তন অনুযায়ী সমন্বয়: মসজিদ প্রাঙ্গণে স্বাভাবিক বাতাসের চলাচল।
- মিস্ট ফ্যান ব্যবস্থা: তাপমাত্রা হ্রাস এবং তাজা বাতাস নিশ্চিত।
- বাতি ও আলো নিয়ন্ত্রণ: দিনের আলোর ওপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয়।
- দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ: বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে ২৪ ঘণ্টা কার্যকর।
এই প্রযুক্তি মুসলিম বিশ্বের জন্য এক অনন্য উদাহরণ। মুসল্লিরা গরম, বৃষ্টি বা ঝড়ের সময়ও স্বাচ্ছন্দ্যে নামাজ আদায় করতে পারেন।
সৌন্দর্য ও আর্কিটেকচার
ছাতাগুলোর নকশা কেবল প্রযুক্তিগত নয়, এটি মসজিদের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করেছে। প্রতিটি ছাতার নকশা ইসলামী স্থাপত্যের শৈলী অনুসরণ করে তৈরি। এর ফলশ্রুতিতে মসজিদে নববির খোলা প্রাঙ্গণ এক অনন্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে।
বিশ্বজুড়ে যারা ইসলামি স্থাপত্য অন্বেষণ করেন, তারা মসজিদে নববির ছাতার নকশা ও প্রযুক্তি দেখে মুগ্ধ হন। এটি আধুনিক স্থাপত্য ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের মিলনের একটি উদাহরণ
মসজিদে নববির ছাতাগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ও স্থাপত্যের এক অনন্য সমন্বয়। এগুলো কেবল সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং মুসল্লিদের আরাম, সুরক্ষা এবং প্রার্থনার সুবিধা নিশ্চিত করতে ডিজাইন করা হয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য মসজিদগুলোতে অনুরূপ ছাতার ইনস্টলেশন এই প্রকল্পকে একটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্তে পরিণত করেছে। এই ছাতাগুলো আধুনিক স্থাপত্য, প্রযুক্তি এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের মিলনের প্রতীক হিসেবে মুসলিম বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
মসজিদে নববির এই ছাতাগুলোকে দেখলে বোঝা যায়, কিভাবে আধুনিক প্রযুক্তি এবং ধর্মীয় স্থানের প্রয়োজন একসাথে কাজ করতে পারে, যা মুসলিম বিশ্বের স্থাপত্য এবং আরামকে নতুন মাত্রা প্রদান করেছে।
MAH – 13581 I Signalbd.com



