প্রযুক্তি

বিশ্বের প্রথম ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হলো এনভিডিয়া

Advertisement

বিশ্বের প্রথম ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্যের কোম্পানির মর্যাদা পেল মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট এনভিডিয়া (NVIDIA)। দীর্ঘ প্রতিযোগিতা শেষে অ্যাপল, মাইক্রোসফট ও অ্যামাজনকে পেছনে ফেলে এই নতুন ইতিহাস গড়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও গ্রাফিক্স চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্ববাজারে এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির বাজারমূল্য ছুঁয়ে গেছে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার— যা বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে।

এনভিডিয়ার সাফল্যের পেছনের কারণ

এনভিডিয়া মূলত গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (GPU) নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। শুরুতে গেমিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য চিপ তৈরি করলেও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের চিপ এখন বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি অবকাঠামোর মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।

কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং এক বিবৃতিতে বলেন, “AI বিপ্লব আমাদের প্রযুক্তি বিশ্বকে নতুনভাবে গড়ে তুলছে, আর এনভিডিয়া এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে।”

এআই চিপের চাহিদাই এনভিডিয়াকে শীর্ষে তুলেছে

বিশেষজ্ঞদের মতে, এনভিডিয়ার বাজারমূল্য বাড়ার প্রধান কারণ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চিপের চাহিদা
বিশ্বের প্রায় সব শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি, যেমন গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন এবং মেটা— সবাই এনভিডিয়ার উন্নত এআই চিপ ব্যবহার করছে তাদের সার্ভার, ক্লাউড ও ডেটা সেন্টারে।

জেনসেন হুয়াং সম্প্রতি জানিয়েছেন, কোম্পানির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিপের অর্ডার বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য সাতটি নতুন সুপারকম্পিউটার তৈরির প্রকল্পও হাতে নিয়েছে তারা।

এই ঘোষণার পরই এনভিডিয়ার শেয়ার বাজারে ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা যায়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের ৫ ট্রিলিয়ন মার্কেট ভ্যালুতে পৌঁছে দেয়।

প্রতিযোগিতায় পেছনে পড়ল অ্যাপল ও মাইক্রোসফট

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানির শীর্ষ আসনে ছিল অ্যাপল ও মাইক্রোসফট। তবে এআই বিপ্লবের ঢেউ এনভিডিয়াকে সেই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে দিয়েছে।

শুধু গত এক বছরে এনভিডিয়ার স্টক প্রাইস বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও প্রত্যাশার প্রতিফলন।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনভিডিয়ার এই উত্থান দেখাচ্ছে, প্রযুক্তি দুনিয়ায় এখন এআই-নির্ভর হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের যুগ শুরু হয়েছে।

পেছনের গল্প: একসময় শুধুই গেমিং চিপ নির্মাতা

১৯৯৩ সালে জেনসেন হুয়াং ও তার সহকর্মীরা এনভিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মূলত ভিডিও গেমের জন্য উন্নত গ্রাফিক্স প্রসেসর তৈরির উদ্দেশ্যে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে GPU প্রযুক্তিকে তারা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা শুধু গেম নয়, ডেটা বিশ্লেষণ, রোবোটিক্স, স্বয়ংচালিত গাড়ি, এমনকি মেডিকেল রিসার্চেও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই দীর্ঘমেয়াদি ভিশন ও গবেষণায় বিনিয়োগই এনভিডিয়ার আজকের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

নতুন বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এনভিডিয়া সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে তারা নকিয়া’র সঙ্গে অংশীদারত্বে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে সিক্সজি (6G) প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য।
এছাড়া তারা বৈশ্বিক পর্যায়ে তাদের চিপ উৎপাদন কেন্দ্র বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে, যাতে এআই চাহিদা মেটাতে সরবরাহ ঘাটতি না হয়।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিনিয়োগগুলো ভবিষ্যতে এনভিডিয়ার অবস্থান আরও শক্ত করবে এবং কোম্পানিটিকে “এআই যুগের মেরুদণ্ড” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

অর্থনীতিতে প্রভাব ও বিশ্লেষকদের মন্তব্য

এনভিডিয়ার এই সাফল্য শুধু কোম্পানিটির নয়, এটি পুরো প্রযুক্তি বাজারের জন্য এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
ওয়াল স্ট্রিটের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এনভিডিয়ার উত্থান এআই শিল্পের প্রতি বৈশ্বিক আস্থাকে আরও দৃঢ় করেছে।

বিশ্লেষক জন লরেন্স বলেন, “এনভিডিয়ার এই অর্জন বোঝায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর ভবিষ্যৎ নয়, এটি বর্তমানের বাস্তবতা।”

ভবিষ্যতের পথে এনভিডিয়া

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক পেরোনোর পর এনভিডিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য হবে ১০ ট্রিলিয়ন মার্কেট ভ্যালু অর্জন করা।
তবে কোম্পানিটিকে এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে উৎপাদন সক্ষমতা, সরবরাহ শৃঙ্খল ও বৈশ্বিক নীতি-নির্ধারণী চ্যালেঞ্জের দিকে।

প্রযুক্তি দুনিয়া এখন দেখছে— এনভিডিয়ার এই যাত্রা কোথায় গিয়ে থামবে।

এনভিডিয়ার ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য শুধু সংখ্যার খেলা নয়; এটি দেখাচ্ছে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের শক্তি, গবেষণার গভীরতা এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতীক।
বিশ্বজুড়ে এখন প্রশ্ন একটাই— “এনভিডিয়ার পর কে?”

এম আর এম – ২০০৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button