
গাজা উপত্যকায় অবিরাম সংঘর্ষ ও অবরোধের ফলে প্রতিদিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে মানবিক বিপর্যয়। খাবার, পানি ও ওষুধের অভাবে দিন কাটছে লাখো মানুষের। এর মধ্যে এক ফিলিস্তিনি মা তার অসহায়তার চরম সীমায় পৌঁছে বলেছেন, “যুদ্ধ যদি চলতে থাকে, আমি আমার জীবন শেষ করে ফেলব।”
গাজার ত্রাণ সংকট ও এক মায়ের হাহাকার
গাজার উপকূলবর্তী এক শিবিরে ছয় সন্তানের মা আবির সোব এখন থাকেন অস্থায়ী তাঁবুর নিচে। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত একটুখানি খাবার বা পানি সংগ্রহের জন্য তাকে লড়াই করতে হয়।
তিনি বলেন, ত্রাণের গাড়িগুলো এলেও অধিকাংশ সময় খালি হাতে ফিরতে হয়। কারণ খাবার সংগ্রহের জন্য ভিড় জমায় mostly পুরুষরা। শক্তি ও গতি দুটোতেই তারা এগিয়ে থাকে। যে কারণে তিনি প্রায়ই বাচ্চাদের ক্ষুধার্ত মুখ নিয়ে ফিরে আসেন।
তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা খাবারের জন্য ছুটে বেড়াই। অনেক দিন এমন গেছে, যখন শুধু ডালের পাতলা স্যুপ ছাড়া কিছুই রান্না করতে পারিনি। অনেক দিন আবার খালি পেটেই ঘুমাতে হয়। এখন আর শরীরে কোনো শক্তি নেই, মাথা ঘোরে, চোখে অন্ধকার দেখি।”
বছরের পর বছর অবরোধের ফল
গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে অবরোধের মধ্যে থাকলেও চলমান সংঘর্ষের কারণে পরিস্থিতি এখন আরও ভয়াবহ। খাবার ও পানির সরবরাহ একেবারেই সীমিত। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর রিপোর্টে জানা গেছে, ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না।
মহিলারা ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। শরণার্থী শিবিরে থাকা হাজার হাজার পরিবার জীবনের মৌলিক চাহিদার জন্য প্রতিদিন সংগ্রাম করছে।
ক্ষুধার প্রভাব: শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ
গাজার শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ থেমে যাচ্ছে। দিনে একবেলা খাবারও না পেয়ে অনেক শিশুকে রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায়। আবির সোবের ১০ বছরের ছেলে ইউসুফও প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে খাবারের সন্ধানে বের হয়। কিন্তু প্রায়ই তাকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়।
আবির বলেন, “আমার সন্তানেরা ক্ষুধার কারণে দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমি মা হয়েও কিছু করতে পারছি না। যুদ্ধ যদি এভাবে চলতে থাকে, আমি হয়তো নিজের জীবন শেষ করে দেব।”
মানবিক সাহায্যের সীমাবদ্ধতা
যুদ্ধক্ষেত্র হওয়ায় গাজায় আন্তর্জাতিক সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আকাশপথে ফেলা ত্রাণের প্যাকেট প্রায়ই জনতার ভিড়ে ছিঁড়ে যায়। অনেকেই সেই খাবার পান না।
এছাড়া, নিরাপত্তার কারণে স্থলপথে ট্রাক পাঠানোও অনিশ্চিত। স্থানীয়রা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় শান্তি না এলে এবং মানবিক করিডর না খুললে হাজার হাজার মানুষ ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হবে।
তাদের মতে, সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব থাকবে বছরের পর বছর।
সারসংক্ষেপ
গাজার এই মায়ের আর্তনাদ যেন আজকের যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি। সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
প্রশ্ন থেকে যায়—মানবতার এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্ব কি দ্রুত এগিয়ে আসবে? নাকি ক্ষুধা, তৃষ্ণা আর যুদ্ধের মধ্যে আরও প্রাণ হারাবে সাধারণ মানুষ?
এম আর এম – ০৬৫২, Signalbd.com