
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় একটি পাটখেত থেকে দেলোয়ার হোসেন (৬২) নামের এক মৌসুমি ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার পকেটে পাওয়া গেছে একটি চিরকুট, যাতে লেখা ছিল কিছু টাকার হিসাব।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মরদেহটি পড়ে ছিল একপাশে মুখ থুবড়ে, তার জামার পকেট থেকে বেরিয়ে থাকা কাগজটি পুলিশের দৃষ্টিগোচর হলে, সেটি উদ্ধার করা হয়। এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক ও রহস্যের ছায়া।
ঘটনাস্থলে কী ঘটেছিল?
খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের মাড়গাঁও প্ল্যান বাজার এলাকার পাশেই রয়েছে একটি পাকা রাস্তার অদূরে বিস্তীর্ণ পাটখেত। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকাল ৭টার দিকে স্থানীয় কৃষকরা পাটখেতে কাজ করতে গিয়ে দেলোয়ার হোসেনের নিথর দেহটি দেখতে পান।
তাৎক্ষণিকভাবে থানায় খবর দিলে, খানসামা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, দেলোয়ার একজন সৎ ও নিরহ ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। এমন একজন মানুষের মরদেহ হঠাৎ পাটখেতে পাওয়া যাওয়ায় সবাই বিস্মিত ও শঙ্কিত।
রহস্যঘেরা চিরকুট: দেনা-পাওনার হিসাব?
দেলোয়ারের জামার পকেট থেকে পাওয়া চিরকুটটি ছিল হাতে লেখা, যেখানে কার কাছে তিনি টাকা পেতেন এবং কাকে টাকা দিতেন তার একটি তালিকা ছিল।
এই চিরকুটকে ঘিরেই উঠেছে একাধিক প্রশ্ন—এটি কি আত্মহত্যার পূর্বাভাস, নাকি এটি কোনো পরিকল্পিত ঘটনার অংশ?
পুলিশ বলছে, চিরকুটের সূত্র ধরে এখন তদন্ত চলছে। পরিবারের সদস্যদের সাথেও কথা বলা হচ্ছে, যাতে বোঝা যায় আর্থিক লেনদেন নিয়ে কোনো জটিলতা ছিল কি না।
পরিবার কী বলছে?
দেলোয়ার হোসেনের পরিবার জানায়, সোমবার সকাল ৯টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। এরপর রাতে ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে তার মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে শেষবার কথা হয়। তখন তিনি জানান, বাড়ি ফিরতে দেরি হবে।
পরিবারের পক্ষ থেকে রাত ১০টার পর একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তার স্ত্রী বলেন, “ও খুব সময়মতো বাড়ি ফিরত। এমন করে আর ফেরে নাই। ফোনও বন্ধ ছিল সারারাত। আমরা চিন্তায় ছিলাম, কিন্তু এমনটা হবে ভাবিনি।”
মেয়ের জামাই রেজাউল বলেন, “কেউ কোনো হুমকি দিয়েছিল কি না বা ব্যবসায়িক কোনো চাপ ছিল কি না, তা আমাদের জানা নেই। এখন সবকিছুই সন্দেহজনক লাগছে।”
পুলিশের তদন্ত ও প্রাথমিক ধারণা
খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজমুল হক জানান, মরদেহের সুরতহাল শেষে সেটিকে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “মরদেহে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন নেই। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
ওসি আরও বলেন, “পকেটে যে চিরকুট পাওয়া গেছে, তা থেকে ধারণা করছি কোনো দেনা-পাওনার বিষয়ে তার মানসিক চাপ ছিল। তবে বিষয়টি আত্মহত্যা না হত্যা, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এলাকাবাসীর মধ্যে ঘটনার পর ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে। পাটখেত যেখানে মরদেহটি পাওয়া গেছে, সেটি জনসমাগমহীন এলাকা হওয়ায় ঘটনাটিকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে নানা গুঞ্জন চলছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান, “এই এলাকায় এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। আমরা চাই পুলিশের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হোক।”
আরেকজন স্থানীয় প্রবীণ বলেন, “দেলোয়ার ভাই চুপচাপ ব্যবসা করতেন। কারো সঙ্গে বিরোধ ছিল না। হঠাৎ করে এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টকর।”
আত্মহত্যা, না পরিকল্পিত হত্যা?
বর্তমানে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান হচ্ছে, দেলোয়ার হোসেন আর্থিক দেনা-পাওনার জটিলতায় মানসিক চাপে ছিলেন।
তবে পরিবার এবং স্থানীয়দের মতে, তিনি কখনো এমন মানসিক অবসাদের ইঙ্গিত দেননি। বরং তার চলাফেরা ছিল স্বাভাবিক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিরকুটে আর্থিক হিসাব থাকলেও সেটি আত্মহত্যার সরাসরি প্রমাণ নয়। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে হলে আরও গভীর তদন্ত প্রয়োজন।
এখনও অনিশ্চয়তায় জড়ানো মৃত্যু
দিনাজপুরের খানসামায় পাটখেতে এক ব্যবসায়ীর রহস্যজনক মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, পুরো এলাকাকেই নাড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও প্রাথমিকভাবে হত্যার প্রমাণ মেলেনি, তবে চিরকুট ও নিখোঁজ থাকার পরিস্থিতি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হতে হলে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও ফোন কলের তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এম আর এম – ০৩৮০, Signalbd.com