বিশ্ব

গাজার স্কুলে মার্কিন বোমা দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল: এইচআরডব্লিউ

Advertisement

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী মার্কিন নির্মিত বোমা ব্যবহার করে যে বিমান হামলা চালিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল—এমনটাই বলেছে বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

সংস্থাটির দাবি, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত স্কুলে ইচ্ছাকৃতভাবে ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন বহু নিরীহ নারী ও শিশু।

কী ঘটেছে গাজার স্কুলে?

মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০২৪ সালের জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে গাজার দুটি পৃথক স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালায়। ওই সময় স্কুলগুলোতে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই দুই হামলাতেই ব্যবহৃত হয়েছে GBU‑39 নামে পরিচিত মার্কিন তৈরি নির্ভুলতা-নির্ভর বোমা।

প্রথম হামলা হয় ২৭ জুলাই, গাজা উপত্যকার দেইর এল-বালাহ এলাকার একটি বালিকা বিদ্যালয়ে, যেখানে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। দ্বিতীয় হামলাটি ঘটে ২১ সেপ্টেম্বর, গাজার জেতুন এলাকার আরেকটি স্কুলে, যেখানে প্রাণ হারান অন্তত ৩৪ জন।

মার্কিন অস্ত্র ও ইসরায়েলি হামলার সম্পর্ক

এইচআরডব্লিউ-এর দাবি, দুটি হামলাতেই মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি বোমা GBU‑39 ব্যবহার করা হয়েছে। এই অস্ত্র ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের’ জন্য তৈরি হলেও, জনাকীর্ণ স্থানে ব্যবহারের ফলে ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য পরিষ্কার প্রমাণ থাকতে হয় যে, সেখান থেকে সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু উল্লিখিত দুইটি স্কুলেই এরকম কোনো সামরিক কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং সেখানে শুধুই আশ্রয় নেওয়া সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশুরা ছিলেন।

শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত স্কুল প্রাঙ্গণ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথম হামলার সময় শিশুরা ক্লাসরুমের মেঝেতে ঘুমাচ্ছিল। দ্বিতীয় হামলায় একটি শ্রেণিকক্ষে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে। বহু মানুষ মারা যান বা গুরুতর আহত হন। এমনকি আহতদের চিকিৎসার সুযোগও ছিল না—কারণ হাসপাতালগুলোও ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছিল।

আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন?

মানবাধিকার সংস্থার মতে, স্কুলের মতো বেসামরিক অবকাঠামোয় সামরিক প্রয়োজন ছাড়া হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অবৈধ। বেসামরিক মানুষের জীবন রক্ষা এবং সংরক্ষণের দায় রাষ্ট্রগুলোর রয়েছে।

এই হামলাগুলোর তদন্ত ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মানবাধিকার সংস্থা মনে করে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এই স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, যেখানে বেসামরিক মানুষের উপস্থিতি সম্পর্কে পূর্বেই জানা ছিল।

শিশুদের জন্য গাজা আজ মৃত্যুপুরী

গাজার অনেক শিশু, যারা একসময় স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করত, তারা এখন যুদ্ধের মুখে উদ্বাস্তু হয়ে উঠেছে। কেউ মায়ের কোলে মৃত্যু বরণ করছে, কেউ আহত হয়ে আর কখনও স্কুলে ফিরতে পারবে না।

এইচআরডব্লিউ-এর বক্তব্য অনুযায়ী, গাজার স্কুলগুলো এখন আর শিক্ষা নয়, বরং মৃত্যুর প্রতীক হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের অস্ত্র রফতানির মাধ্যমে একটি সংঘর্ষের পক্ষে সক্রিয় সহযোগী হিসেবে কাজ করছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।

মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে যদি বেসামরিক স্থাপনায় বারবার হামলা চালানো হয়, তবে কেবল ইসরায়েল নয়, যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বও এড়িয়ে যাওয়া যায় না—এমন দাবি উঠছে মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজ থেকে।

“স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর হামলা শুধু নির্মমতাই নয়, এটি মানবাধিকার ও যুদ্ধ আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।”
— মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আরও কত মৃত্যু লাগবে?

গাজায় প্রতিদিন শিশু, নারী ও নিরপরাধ মানুষ জীবন হারাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও দৃশ্যত নীরব। এইচআরডব্লিউ-এর রিপোর্ট আরও একবার তুলে ধরলো—এই সংঘাত শুধু একটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং পুরো বিশ্বব্যবস্থার মানবিক দায়বদ্ধতারও বড় প্রশ্ন।

এম আর এম – ০৭৪০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button