
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে সাত মাস বয়সি যমজ কন্যা শিশুকে ডোবায় ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বাবা-মা একে অপরকে দায়ী করছেন। পরিবারিক কলহের জেরেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের। তদন্ত চলছে।
পারিবারিক কলহে নির্মম পরিণতি
শিশুদের মা শান্তা বেগম অভিযোগ করেছেন, তার স্বামী সোহাগ শেখ হঠাৎ করেই দুই কন্যাকে কোলে নিয়ে পাশের ডোবায় ফেলে দেন। এ সময় তিনি ঘরে ছিলেন এবং তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন।
অন্যদিকে সোহাগ শেখের দাবি, তার স্ত্রী শান্তাই দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন। তিনি ঘরে ছিলেন না এবং ফিরে এসে দেখেন, সন্তানরা নেই।
দুই পক্ষের এই পরস্পরবিরোধী দাবির মাঝে রহস্যময় হয়ে উঠেছে ঘটনার প্রকৃত রূপ।
উদ্ধার ও চিকিৎসা: বাঁচানো গেল না শিশুদের
স্থানীয়রা জানান, রাত আনুমানিক ৮টার দিকে সোহাগের বাড়ি থেকে কান্না ও চিৎকার শুনে ছুটে আসেন তারা। তখন শান্তা জানান, সোহাগ দুই শিশুকে ডোবায় ফেলে দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসকরা জানান, শিশু দুটির আগেই মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সিনথিয়া নূর বলেন, “শিশুদের পেটভর্তি পানি ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পানিতে পড়ার পরই তাদের মৃত্যু হয়।”
পারিবারিক কলহের ইতিহাস: আগেও ছিল টানাপোড়েন
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শান্তা ও সোহাগের দাম্পত্য জীবনে দীর্ঘদিন ধরেই কলহ চলছিল। শান্তা মাঝে একাধিকবার বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। আবারো ফিরিয়ে আনা হয়েছিল পারিবারিক মধ্যস্থতায়। তবে পরিস্থিতি কখনোই স্থায়ীভাবে মীমাংসিত হয়নি।
পুলিশ বলছে, এই কলহই হয়তো এই ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে।
পুলিশি তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপ
শ্রীনগর থানার ওসি নাজমূল হুদা খান বলেন, “প্রাথমিকভাবে শিশুদের পানিতে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ পেয়েছি। মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। সত্য উদঘাটনে আমরা কাজ করছি।”
তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়া ফেরত দিনমজুর সোহাগ শেখকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হলেও কে দোষী, তা ময়নাতদন্ত ও তদন্ত রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে।
প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের প্রতিক্রিয়া
শিশুদের চাচা সাকিব শেখ বলেন, “আমি যখন ছুটে যাই, তখন দেখি দুই শিশু পুকুরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। এ দৃশ্য কোনো বাবা-চাচার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না।”
প্রতিবেশী রাবেয়া খাতুন বলেন, “ওদের ঘরে প্রায়ই ঝগড়া চলত। তবে এমন ভয়ংকর কিছু ঘটবে আমরা কখনো কল্পনাও করিনি।”
শিশু নির্যাতনের বাড়ন্ত চিত্র: একটি ভয়াবহ প্রবণতা
বাংলাদেশে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হত্যার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েই চলেছে। পারিবারিক কলহ, দারিদ্র্য, মানসিক অস্থিরতা এবং মাদকাসক্তির মতো নানা কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনাগুলো ঘটছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর শতাধিক শিশু নির্যাতনের শিকার হয়, যার মধ্যে অনেকেই জীবন হারায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবারে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা জরুরি।
এই সমাজে শিশুরা কতটা নিরাপদ?
এমন এক সমাজে আমরা বাস করছি যেখানে শিশুরা নিরাপদ নয় এমনকি নিজের পরিবারেও। পারিবারিক সমস্যার দায়ভার যেন শিশুদের গায়ে গিয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের সুরক্ষায় শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ নয়, সামাজিক সচেতনতা, পারিবারিক বন্ধন ও সহনশীলতা বাড়ানো জরুরি।
সংক্ষেপ
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বিবন্দি গ্রামে সোমবার রাতে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম হয়। মাত্র সাত মাস বয়সি যমজ দুই কন্যা শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় শিশুদের বাবা ও মা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
সাত মাসের নিষ্পাপ যমজ শিশুর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্যই এক করুণ বার্তা। পুলিশ তদন্ত করছে, দোষী কে—তা হয়তো জানা যাবে। তবে প্রশ্ন থেকে যাবে—এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সমাজ হিসেবে আমরা কতটা প্রস্তুত?
এম আর এম – ০২২৩, Signalbd.com