
ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং ক্ষমতার নতুন দিক প্রকাশ করল দেশটি। এবার তারা সফলভাবে তৈরি করল ২ হাজার কিলোমিটার পাল্লার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, যার নাম ‘অগ্নি-প্রাইম’। এটি ভারতকে আরও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দেবে এবং দেশকে আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষার পথে আরও দৃঢ় করবে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্প্রতি পরীক্ষা চালানো হয়েছে এবং তা সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে। ভারতকে বিশ্বের সীমিত সংখ্যক দেশগুলোর মধ্যে নিয়ে এসেছে যারা ক্যানিস্টারাইজড লঞ্চ সিস্টেম ব্যবহার করে চলন্ত যানবাহন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম।
অগ্নি-প্রাইম: পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র
‘অগ্নি-প্রাইম’ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা সর্বোচ্চ ২,০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশেষভাবে এটিতে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যুক্ত রয়েছে।
রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য অনুযায়ী:
“প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দেন। আমাদের এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তারই অংশ। দেশীয় প্রতিরক্ষা বিভাগ আত্মনির্ভরতার পথে অগ্রসর হচ্ছে। ‘অগ্নি-প্রাইম’ ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।”
রেলভিত্তিক মোবাইল লাঞ্চার: বিশ্বে সীমিত দেশেই আছে
অগ্নি-প্রাইম ক্ষেপণাস্ত্রটি রেলভিত্তিক ক্যানিস্টারাইজড লাঞ্চার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এর মানে, এটি চলন্ত ট্রেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম। এমন প্রযুক্তি বিশ্বের খুবই সীমিত দেশেই বিদ্যমান।
এই সিস্টেমের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রকে দ্রুত এবং নিরাপদভাবে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ভারতকে কৌশলগত সুবিধা প্রদান করবে।
প্রতিরক্ষা বিভাগ ও ডিআরডিওর ভূমিকা
এই সফল উৎক্ষেপণ নিশ্চিত করতে ডিআরডিও (DRDO), স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স কমান্ড এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী যৌথভাবে কাজ করেছে। ডিআরডিও দীর্ঘদিন ধরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছে।
রাজনাথ সিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন:
“ডিআরডিও এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল সদস্যদের অভিনন্দন। ‘অগ্নি-প্রাইম’ আমাদের অস্ত্রভাণ্ডারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।”
ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে ভারতের অগ্রগতি
ভারত অগ্নি সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে বহু বছর ধরে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- অগ্নি-I: ছোট পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।
- অগ্নি-II: মধ্য পাল্লার, ১,২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
- অগ্নি-III: দীর্ঘ পাল্লার, ৩,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
- অগ্নি-IV ও অগ্নি-V: আরও উন্নত ও দীর্ঘ পাল্লার।
এছাড়া, অগ্নি-প্রাইম বিশেষভাবে উন্নত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, উচ্চ নির্ভুলতা এবং চলন্ত লঞ্চ ক্ষমতা সহ তৈরি করা হয়েছে, যা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার এই উন্নতি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
“অগ্নি-প্রাইম ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে আরও আত্মনির্ভর ও কৌশলগতভাবে কার্যকর করেছে। এটি শুধুমাত্র দেশীয় নিরাপত্তার জন্য নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের অবস্থান শক্ত করবে।”
চীন, পাকিস্তান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলির প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা ভারতের এই নতুন প্রযুক্তিকে গভীর নজরে রাখছেন।
নতুন প্রযুক্তি ও বৈশিষ্ট্য
অগ্নি-প্রাইম ক্ষেপণাস্ত্রের বিশেষত্বগুলো হলো:
- রেলভিত্তিক লঞ্চ সক্ষমতা – চলন্ত ট্রেন থেকেও নিরাপদে উৎক্ষেপণ।
- ক্যানিস্টারাইজড লঞ্চ সিস্টেম – রকেটের সংরক্ষণ ও স্থিতিশীল উৎক্ষেপণ নিশ্চিত করে।
- উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম – উচ্চ নির্ভুলতা এবং লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি আঘাত।
- দীর্ঘ পাল্লা – ২,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত করতে সক্ষম।
- উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য – হ্যাকিং বা আক্রমণ প্রতিরোধে উন্নত প্রযুক্তি।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভারতকে সামরিকভাবে আরও দৃঢ় ও কৌশলগতভাবে স্বাধীন করে তুলেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টি
রাজনাথ সিং বলেছেন,
“আমরা আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা এবং উচ্চমানের প্রযুক্তি উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। ‘অগ্নি-প্রাইম’ এই অগ্রগতির এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। এটি আমাদের দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে আরও শক্তিশালী করবে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও অপরিহার্য। অগ্নি-প্রাইম সেই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গী।
ভারতের এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি দেশীয় প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, কৌশলগত স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় একটি পদক্ষেপ। এটি শুধুমাত্র অস্ত্রশক্তি বৃদ্ধি করে না, বরং দেশীয় প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতাকেও তুলে ধরে।
সংক্ষেপে, অগ্নি-প্রাইম:
- ২,০০০ কিমি পর্যন্ত আঘাত করতে সক্ষম।
- চলন্ত রেলভাহন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য।
- পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তি সমৃদ্ধ।
- ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও আত্মনির্ভরতার বড় অর্জন।
ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিমণ্ডলে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে।
MAH – 13012 I Signalbd.com