প্রযুক্তি

চীনের কৃত্রিম সূর্যের নতুন রেকর্ড

এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক (ইএএসটি) চুল্লিউইকিমিডিয়া

চীনের কৃত্রিম সূর্যের নতুন রেকর্ড দীর্ঘদিন ধরেই কৃত্রিম সূর্য তৈরির গবেষণা করছে চীন। এরই মধ্যে এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক (ইএএসটি) নামের চুল্লি তৈরি করেছে চীন, যা কৃত্রিম সূর্য নামে পরিচিত। এই চুল্লিতে সম্প্রতি ১ হাজার ৬৬ সেকেন্ডের জন্য প্লাজমার একটি অবিচ্ছিন্ন লুপ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। আগের লুপের স্থিতিকাল ছিল ৪০৩ সেকেন্ড। নতুন এই রেকর্ডকে পারমাণবিক ফিউশন তৈরির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্লাজমা ফিউশন ক্রিয়ার ক্ষেত্রে পদার্থের একটি উচ্চ-শক্তির অবস্থা।

ইএএসটি চুল্লি চুম্বকীয় আবদ্ধ অবস্থায় পদার্থ প্লাজমা তৈরির জন্য নকশা করা হয়েছে। চুল্লিতে কারিগরি উন্নয়নের জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য প্লাজমা পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি চুল্লিতে একটি উন্নত হিটিং সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে। চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব প্লাজমা ফিজিকসের পরিচালক সং ইউনতাও এই পরীক্ষাকে ভবিষ্যতের ফিউশন পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন।

সং ইউনতাও জানিয়েছেন, ক্রমাগত বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্জনের জন্য হাজার হাজার সেকেন্ডের স্থিতিশীল প্লাজমা অপারেশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নিউক্লিয়ার ফিউশন সূর্যের অনুকরণ করে হালকা পরমাণুকে তীব্র তাপ ও চাপের মধ্যে মিশ্রিত করে ভারী পরমাণু গঠন করে শক্তি মুক্ত করে। সূর্যের এমন প্রক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন হয়। পৃথিবীভিত্তিক চুল্লিতে অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে এমন প্লাজমা পরিস্থিতি তৈরি করা যায়। যদিও বর্তমানের বিভিন্ন ফিউশন চুল্লি বর্তমানে তাদের উৎপাদনের চেয়ে বেশি শক্তি ব্যবহার করে। ভবিষ্যতে এমন চুল্লি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। যদিও সেই সুযোগ আসতে কয়েক দশক লেগে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফিউশন শক্তির সম্ভাবনা

ফিউশন শক্তি সূর্যের শক্তির উৎস। এই প্রক্রিয়ায় দুটি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস তৈরি করে, যা বিপুল পরিমাণ শক্তি মুক্ত করে। চীনের এই সাফল্য ফিউশন শক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

চীনের কৃত্রিম সূর্য প্রকল্পের অগ্রগতি

চীন ২০০৬ সাল থেকে EAST প্রকল্পের মাধ্যমে ফিউশন শক্তি গবেষণায় নিয়মিত অগ্রগতি করছে। ২০২৩ সালে, তারা ৪০৩ সেকেন্ডের জন্য প্লাজমা স্থায়ী রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমানে, ১০০০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্লাজমা স্থায়ী রাখা তাদের নতুন রেকর্ড।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

চীন ফিউশন শক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরও গবেষণা ও উন্নয়ন করছে। তারা মহাকাশে সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে, যা পৃথিবীতে শক্তি সরবরাহের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

চীনের এই সাফল্য বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে আগ্রহ ও আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। ফিউশন শক্তি উন্নয়নে অন্যান্য দেশও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে চীনের এই অগ্রগতি তাদেরকে ফিউশন শক্তির ক্ষেত্রে নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button