প্রযুক্তি

আইফোন ১৭ উন্মোচনের পর অ্যাপলের বাজারমূল্য থেকে উধাও ১১২ বিলিয়ন ডলার

উদ্ভাবনে পিছিয়ে পড়া ও এআই কৌশলে দোদুল্যমানতায় হতাশ বিনিয়োগকারীরা ক্যালিফোর্নিয়ার কুপার্টিনোতে আয়োজিত বহুল প্রতীক্ষিত ইভেন্টে নতুন আইফোন ১৭ উন্মোচনের পর অ্যাপলকে বড় ধরনের বাজার ধাক্কা সামলাতে হয়েছে। উন্মোচনের দিনেই কোম্পানির শেয়ারদর ১.৫% কমে যায় এবং পরের দিন আরও ৩.২৩% পড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২২৬.৭৯ ডলারে। দুই দিনে কোম্পানির বাজারমূল্য থেকে হারিয়ে যায় প্রায় ১১২ বিলিয়ন ডলার—যা প্রখ্যাত ব্র্যান্ড নাইকির মোট বাজারমূল্যের সমান।

বিনিয়োগকারীদের হতাশার মূল কারণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দরপতন কেবল সংখ্যার হিসাব নয়, বরং অ্যাপলের ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তার প্রতিফলন।

  • উদ্ভাবনের ঘাটতি: গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের আশা করলেও, নতুন সিরিজে এসেছে সামান্য পাতলা নকশা ও সীমিত হার্ডওয়্যার আপডেট।
  • এআই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া: অ্যাপল তাদের উন্নত সিরি সংস্করণ উন্মোচন ২০২৬ সাল পর্যন্ত স্থগিত করেছে, যেখানে গুগল ও স্যামসাং ইতোমধ্যেই এআই দৌড়ে এগিয়ে গেছে।
  • তথ্য ফাঁসের ধাক্কা: আলট্রা-থিন “আইফোন এয়ার” মডেলের খবর আগে থেকেই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় লঞ্চ ইভেন্টে নতুনত্বের অভাব ছিল।
  • মুনাফার চাপ: অ্যাপল জানিয়েছে, অতিরিক্ত শুল্কের খরচ নিজেরাই বহন করবে, ক্রেতাদের উপর দাম বাড়ানো হবে না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এতে মুনাফা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন।
  • লেনদেনে শ্লথ গতি: লঞ্চের দিনই বাজারে লেনদেন ছিল কম, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।

শেয়ারবাজারে সতর্ক সংকেত

আইফোন ১৭ লঞ্চের আগে অ্যাপলের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৩.৫২ ট্রিলিয়ন ডলার। শেয়ারদর কমায় প্রায় ১১২.৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এমনকি প্রথম দিনের ১.৫% পতনই কেটে নিয়েছে প্রায় ৫২.৮ বিলিয়ন ডলার।

পরিস্থিতির পর, ফিলিপ সিকিউরিটিজ ও ডিএ ডেভিডসনসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের শেয়ারের রেটিং কমিয়ে দিয়েছে। তাদের মতে, নতুন সিরিজ গ্রাহকদের ফোন আপগ্রেডে উৎসাহিত করার মতো কোনো গেম-চেঞ্জিং উদ্ভাবন আনতে পারেনি।

নতুনত্ব যথেষ্ট নয়?

অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক উন্মোচন করেছেন অতিসূক্ষ্ম “আইফোন এয়ার”, যা স্যামসাং এস২৫ এজের চেয়েও পাতলা। ফোনটিতে আছে এ১৯ প্রো চিপ, টাইটানিয়াম ফ্রেম ও উন্নত সিরামিক শিল্ড গ্লাস। টেকপ্রেমীরা ডিজাইন ও স্থায়িত্বে মুগ্ধ হলেও, ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি বড় ধরনের উদ্ভাবন মনে হয়নি—বিশেষ করে যখন এআই ফিচারগুলো পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মডেলটিতে মাত্র একটি ক্যামেরা রাখা হয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থান

২০২৫ সালজুড়ে অ্যাপলের শেয়ারদর ইতোমধ্যেই ৬.৪% কমেছে। অপরদিকে মাইক্রোসফট ও এনভিডিয়া এআই সাফল্যের কারণে বাজারমূল্যে ধারাবাহিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাপল যদি দ্রুত এআই প্রযুক্তির ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে তারা প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তাদের শীর্ষস্থান হারাতে পারে।

সামনে পথচলা

আইফোন ১৭ হয়তো সাধারণ গ্রাহকদের কাছে উৎসব মৌসুমে জনপ্রিয় হবে। তবে বিনিয়োগকারীদের কাছে বার্তাটি স্পষ্ট—অ্যাপলের কৌশলগত ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। যে প্রতিষ্ঠান একসময় প্রযুক্তি জগতে ট্রেন্ডসেটার ছিল, তাদের এখন আবার প্রমাণ করতে হবে তারা এখনও সেই অবস্থানে আছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button