প্রযুক্তি জগতে নতুন এক মাইলফলক স্থাপন করল মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যাপল। তারা উন্মোচন করেছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পাতলা আইফোন মডেল, নাম আইফোন এয়ার। নতুন এই স্মার্টফোনকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি অনুরাগীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশিদের জন্য গর্বের বিষয় হলো—এই মডেলের প্রধান ডিজাইনার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবিদুর চৌধুরী।
আইফোন এয়ারের ডিজাইন ও বৈশিষ্ট্য
আইফোন এয়ার সম্পূর্ণ টাইটানিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি, যা একে করেছে হালকা কিন্তু মজবুত। সামনের ও পেছনের অংশে ব্যবহার করা হয়েছে সিরামিক শিল্ড গ্লাস, যা ফোনটিকে স্ক্র্যাচ-প্রতিরোধী ও টেকসই করেছে।
এই ফোনটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর পাতলা ডিজাইন। এর ক্যামেরা মডিউল, চিপসেট এবং ব্যাটারি এমনভাবে সমন্বিত করা হয়েছে যাতে সীমিত জায়গাতেও শক্তিশালী পারফরম্যান্স দিতে পারে।
ফোনটিতে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত ফটোগ্রাফি ও ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, যা তুলনামূলক বড় মডেলের মতোই দক্ষতা প্রদর্শন করবে। এর ফলে ছবি তোলা, ভিডিও রেকর্ডিং কিংবা গেম খেলার সময় ব্যবহারকারীরা পাবেন সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা।
ডিজাইনার আবিদুর চৌধুরীর গল্প
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবিদুর চৌধুরীর জন্ম ব্রিটেনে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে সেখানেই। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে বসবাস করছেন। আবিদুর লন্ডনের লাফবারো ইউনিভার্সিটি থেকে প্রোডাক্ট ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।
অ্যাপলে যোগ দেওয়ার আগে কিছু সময় তিনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। ২০১৯ সালে অ্যাপলে যোগ দেওয়ার পর থেকে গত ৭ বছর ধরে তিনি প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ পণ্য উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন। নিজেকে তিনি একজন “সমস্যা সমাধানকারী” হিসেবে পরিচয় দেন এবং এমন পণ্য তৈরি করতে আগ্রহী যা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না।
অ্যাপলের নতুন সিরিজের উন্মোচন
শুধু আইফোন এয়ার নয়, একইসঙ্গে অ্যাপল উন্মোচন করেছে নতুন প্রজন্মের আরও কয়েকটি মডেল। এর মধ্যে রয়েছে আইফোন ১৭, আইফোন ১৭ প্রো এবং আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স।
এই মডেলগুলোতে থাকছে আরও উন্নত ক্যামেরা সিস্টেম, নতুন অ্যাপল এ১৯ প্রো চিপ এবং বড় ডিসপ্লে। ফলে ব্যবহারকারীরা একদিকে যেমন হালকা আইফোন এয়ারের স্বাদ পাবেন, অন্যদিকে প্রো সিরিজে পেয়ে যাবেন উন্নত ফিচারের সমাহার।
পূর্ববর্তী আইফোন ডিজাইনের সঙ্গে তুলনা
অ্যাপল সবসময়ই তাদের নকশা এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার জন্য পরিচিত। তবে আইফোন এয়ারকে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে স্লিম মডেল বলা হচ্ছে।
এর আগে আইফোন ১২ সিরিজকে ‘স্লিম ডিজাইন’-এর জন্য আলোচিত করা হলেও আইফোন এয়ার সেটিকে অনেকটাই ছাপিয়ে গেছে। কমপ্যাক্ট ডিজাইনের কারণে এটি সহজেই পকেটে রাখা যাবে, অথচ পারফরম্যান্সে থাকবে উচ্চমানের।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইফোন এয়ার শুধু অ্যাপলের নয়, পুরো স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রির জন্য এক নতুন ধারা তৈরি করবে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, স্লিম ডিজাইনের পাশাপাশি AI ভিত্তিক সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশন আগামী দিনের মোবাইল প্রযুক্তির প্রধান ট্রেন্ড হতে পারে।
একজন বিশ্লেষকের ভাষায়: “আইফোন এয়ার প্রমাণ করেছে, পাতলা স্মার্টফোন মানেই কম শক্তিশালী নয়; বরং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সমাধানও এতে সম্ভব।”
মূল্য ও বাজার প্রত্যাশা
আইফোন এয়ারের ২৫৬ জিবি মডেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯৯ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার কাছাকাছি দাঁড়ায়। খুব শিগগিরই বিভিন্ন দেশে প্রি-অর্ডার শুরু হবে।
প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে, বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে আইফোন এয়ারের চাহিদা বেশি হতে পারে। কারণ এই অঞ্চলের তরুণ ব্যবহারকারীরা স্টাইলিশ কিন্তু শক্তিশালী ডিভাইসের প্রতি আগ্রহী।
অ্যাপলের আইফোন এয়ার নিঃসন্দেহে প্রযুক্তি জগতে নতুন দিগন্ত খুলেছে। পাতলা ডিজাইন, টাইটানিয়াম বডি, AI-চালিত সিস্টেম এবং আধুনিক ক্যামেরা প্রযুক্তির সমন্বয় এটিকে করেছে অনন্য।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবিদুর চৌধুরীর নকশা করা এই স্মার্টফোন শুধু প্রযুক্তি নয়, আমাদের জন্যও গর্বের প্রতীক। এখন দেখার বিষয়—ভবিষ্যতে অ্যাপল ও আবিদুর আরও কী চমক নিয়ে আসেন বিশ্বকে।
এম আর এম – ১২৬৯,Signalbd.com



