এআই দিয়ে চাকরি খোঁজার নতুন যুগ: লিংকডইনের বিকল্প আনছে ওপেনএআই

ডিজিটাল যুগে চাকরি খোঁজার পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ওপেনএআই। চ্যাটজিপিটি তৈরি করা এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবার ঘোষণা দিয়েছে এক অভূতপূর্ব সেবা চালুর। তাদের নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীরা এবং নিয়োগদাতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন। এই সেবার নাম দেওয়া হয়েছে “ওপেনএআই জবস প্ল্যাটফর্ম” এবং এটি ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে বলে জানা গেছে।
কেন এই উদ্যোগ?
বর্তমানে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। নিয়োগদাতারা চান সঠিক দক্ষতা সম্পন্ন কর্মী, আর চাকরি প্রার্থীরা চান এমন প্রতিষ্ঠান যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা কাজে লাগাতে পারবেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে, অনেক জটিলতা থাকে। এখানেই আসছে ওপেনএআইয়ের এআই-ভিত্তিক সমাধান।
ওপেনএআইয়ের অ্যাপ্লিকেশন বিভাগের প্রধান ফিদজি সিমো এক ব্লগ পোস্টে জানান—
“আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করা, যা কোম্পানি ও প্রার্থীর মধ্যে সঠিক মিল খুঁজে পাবে। বিশেষ করে ছোট ব্যবসা, স্টার্টআপ এবং স্থানীয় সরকারি সংস্থা যারা দক্ষ জনবল খুঁজছে, তাদের জন্য প্ল্যাটফর্মে আলাদা সুবিধা থাকবে।”
লিংকডইনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ওপেনএআই
এই ঘোষণা আসার পর থেকেই টেক দুনিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন—এটি কি লিংকডইনের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে?
লিংকডইন দীর্ঘদিন ধরে পেশাগত নেটওয়ার্কিং জগতে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছে। বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটির ব্যবহারকারী সংখ্যা ৯০ কোটির বেশি। কিন্তু ওপেনএআইয়ের নতুন সেবা এআই-চালিত হওয়ায় চাকরি খোঁজার প্রক্রিয়া আরও স্মার্ট ও দ্রুত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও মজার ব্যাপার হলো—লিংকডইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান ছিলেন ওপেনএআইয়ের অন্যতম প্রাথমিক বিনিয়োগকারী। পাশাপাশি, লিংকডইনের মালিক মাইক্রোসফট এবং মাইক্রোসফটই ওপেনএআইয়ের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। অর্থাৎ একভাবে বললে, একই গোষ্ঠীর ভেতরে প্রতিযোগিতা শুরু হতে যাচ্ছে।
ওপেনএআইয়ের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা
চ্যাটজিপিটি দিয়ে শুরু হলেও, ওপেনএআই এখন আর কেবল চ্যাটবটেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। প্রতিষ্ঠানটি নতুন নতুন অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে—
ওয়েব ব্রাউজার (এআই-চালিত স্মার্ট ব্রাউজার)
সামাজিক নেটওয়ার্কিং অ্যাপ
ওপেনএআই জবস প্ল্যাটফর্ম
এর মাধ্যমে ওপেনএআই ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ এআই-ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চাচ্ছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা কাজ, যোগাযোগ এবং তথ্য অনুসন্ধান সবকিছু এক জায়গায় করতে পারবেন।
এআই দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য “ওপেনএআই একাডেমি”
চাকরির বাজারে এআইয়ের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। অনেক কাজ হারিয়ে যাচ্ছে, আবার নতুন সুযোগও তৈরি হচ্ছে। এজন্যই ওপেনএআই চালু করছে “ওপেনএআই একাডেমি”, যেখানে এআই-সম্পর্কিত দক্ষতা শেখানো হবে।
প্রথমে একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু হবে ২০২৫ সালের শেষ দিকে। ওয়ালমার্টের সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হবে। দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১ কোটি আমেরিকানকে এআই-দক্ষতায় সার্টিফাই করা।
এখানে থাকবে বিভিন্ন লেভেলের সার্টিফিকেশন:
- বেসিক এআই ফ্লুয়েন্সি সার্টিফিকেট
- অ্যাডভান্সড মেশিন লার্নিং সার্টিফিকেট
- এআই ইন্টিগ্রেশন স্পেশালিস্ট
চাকরির বাজারে এআইয়ের প্রভাব
ওপেনএআইয়ের এই পদক্ষেপ এমন সময়ে এসেছে, যখন এআইয়ের কারণে চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে ভয় বাড়ছে। অ্যানথ্রোপিক নামক একটি শীর্ষ এআই কোম্পানির সিইও দারিও আমোডেই পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০% এন্ট্রি-লেভেল চাকরি হারিয়ে যেতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে ওপেনএআই বলছে—তাদের লক্ষ্য হলো মানুষের জন্য নতুন দক্ষতা তৈরি করা, যাতে তারা ভবিষ্যতের বাজারে টিকে থাকতে পারেন।
ফিদজি সিমো তাঁর ব্লগে লিখেছেন:
“হ্যাঁ, পরিবর্তন আসবেই। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হলো মানুষকে অভিযোজনে সাহায্য করা, এআই দক্ষতা শেখানো এবং সেই দক্ষতাকে সঠিক কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত করা।”
হোয়াইট হাউসে বৈঠক
সম্প্রতি ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যানসহ বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি নেতারা হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বৈঠক করেছেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল—
- চাকরির বাজারে এআইয়ের প্রভাব
- নতুন দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা
- প্রযুক্তি-নির্ভর অর্থনীতিতে সমতা বজায় রাখা
ওপেনএআই জবস প্ল্যাটফর্মের সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য
ওপেনএআই এখনও বিস্তারিত ফিচার প্রকাশ না করলেও, ধারণা করা হচ্ছে প্ল্যাটফর্মে থাকবে:
এআই-চালিত রেজ্যুমে অপ্টিমাইজেশন
ক্যারিয়ার সাজেশন টুল
স্মার্ট ম্যাচিং সিস্টেম (কোম্পানি ও প্রার্থীর সঠিক মিল খুঁজে দেওয়া)
ইন্টারভিউ সিমুলেশন
রিমোট ও হাইব্রিড চাকরির সুপারিশ
কেন এটি চাকরির ভবিষ্যৎ বদলে দেবে?
লিংকডইন মূলত একটি নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নিয়োগদাতারা ও চাকরি প্রার্থীরা সংযুক্ত হয়। কিন্তু ওপেনএআইয়ের নতুন প্ল্যাটফর্ম হবে এআই-চালিত—অর্থাৎ কেবল প্রোফাইল দেখা নয়, বরং ডেটা অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে কোন প্রার্থী কোন চাকরির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত তা শনাক্ত করা হবে।
চাকরির বাজারে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু
ওপেনএআইয়ের এই পদক্ষেপ চাকরির বাজারে একটি বড় পরিবর্তন আনবে। বিশেষ করে লিংকডইন, ইনডিড, গ্লাসডোরের মতো প্রচলিত প্ল্যাটফর্মের জন্য এটি হবে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ব্যবহারকারীরা এখন স্মার্ট সল্যুশন চায়, যেখানে সময় বাঁচে এবং ফলাফল বেশি নিশ্চিত হয়।
এআই প্রযুক্তি যেভাবে বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে, তাতে চাকরির বাজারও নতুন করে গঠিত হচ্ছে। ওপেনএআইয়ের এই নতুন উদ্যোগ শুধু একটি প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের এক নতুন দিগন্ত।
যারা নতুন যুগের চাকরির দুনিয়ায় এগিয়ে থাকতে চান, তাদের জন্য এআই-দক্ষতা অর্জন এখন আর অপশন নয়—এটি একেবারেই জরুরি।
MAH – 12681, Signalbd.com