মাইক্রোসফটের ইসরায়েল-সংক্রান্ত প্রতিবাদে ৪ কর্মী বরখাস্ত

মাইক্রোসফট সম্প্রতি চার কর্মীকে বরখাস্ত করেছে, যারা ইসরায়েলের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্কের প্রতিবাদে অফিসে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। এই পদক্ষেপটি কোম্পানির নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে নেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা দাবি করেছেন, মাইক্রোসফট ইসরায়েলকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে। এই ঘটনায় কর্মীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও কর্পোরেট নীতির মধ্যে সংঘাতের বিষয়টি সামনে এসেছে।
মাইক্রোসফটের চার কর্মী বরখাস্ত
মাইক্রোসফট সম্প্রতি চার কর্মীকে বরখাস্ত করেছে, যারা কোম্পানির ইসরায়েল-সংক্রান্ত সম্পর্কের প্রতিবাদে অফিসে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। এই কর্মীরা হলেন: অ্যানা হ্যাটল, রিকি ফামেলি, নিসরিন জারাদাত, এবং জুলিয়াস শ্যান। তাদের মধ্যে অ্যানা হ্যাটল ও রিকি ফামেলি মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথের অফিসে অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিলেন, এবং নিসরিন জারাদাত ও জুলিয়াস শ্যান সম্প্রতি কোম্পানির সদর দপ্তরে প্রতিবাদী তাঁবু স্থাপন করেছিলেন।
মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই কর্মীদের বরখাস্ত করা হয়েছে কোম্পানির নীতিমালা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে। তাদের দাবি, সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলোর ফলে অফিসে ‘গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি’ তৈরি হয়েছিল।
‘নো অ্যাজিউর ফর অ্যাপার্থেইড’ আন্দোলনের উত্থান
এই প্রতিবাদটি ‘নো অ্যাজিউর ফর অ্যাপার্থেইড’ নামক একটি কর্মী গোষ্ঠীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই গোষ্ঠীটি মাইক্রোসফটের ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ‘অ্যাজিউর’কে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহে ব্যবহারের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের দাবি, মাইক্রোসফট ইসরায়েলকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়তা করছে।
গোষ্ঠীটির সদস্য অ্যানা হ্যাটল এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা এখানে এসেছি কারণ মাইক্রোসফট ইসরায়েলকে গণহত্যা চালাতে সহায়তা করছে এবং নিজ কর্মীদের প্রতারণা করছে এই বাস্তবতা আড়াল করে।”
মাইক্রোসফটের প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত
মাইক্রোসফট এই প্রতিবাদের পর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, তারা একটি স্বাধীন আইনজীবী প্রতিষ্ঠান কভিংটন অ্যান্ড বার্লিং এলএলপি-কে দিয়ে এই বিষয়ে একটি তদন্ত পরিচালনা করছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনঃমূল্যায়ন করবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
কর্মীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও কর্পোরেট নীতি
এই ঘটনা কর্মীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও কর্পোরেট নীতির মধ্যে সংঘাতের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেক কর্মী মনে করেন, কোম্পানির নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া তাদের অধিকার, তবে কোম্পানি তাদের আচরণবিধি ও নিরাপত্তা নীতির ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি আঘাত হিসেবে দেখছে। তারা দাবি করছে, কোম্পানিগুলোকে তাদের কর্মীদের মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্মান করতে হবে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব ও কর্পোরেট সংস্কৃতির পরিবর্তন
এই ঘটনা কর্পোরেট সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। অনেক কোম্পানি এখন কর্মীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে। তবে, কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা তাদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হচ্ছে।
মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপ কর্মীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও কর্পোরেট নীতির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। ভবিষ্যতে, এই ধরনের ঘটনা কর্পোরেট সংস্কৃতি ও কর্মীদের অধিকার রক্ষায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সহায়ক হতে পারে।
MAH – 12546, Signalbd.com