উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় সোমবার ঘটে যাওয়া যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা করতে ভারত থেকে ঢাকায় আসছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সের একটি দল। এছাড়া প্রয়োজনীয় মেডিকেল ইকুইপমেন্টও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই সহায়তা পাঠানো হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্রুত সহায়তা কার্যক্রম
দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এই ঘটনায় আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন দগ্ধ হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বার্ন ইউনিটে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রাসঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অনুরোধ জানানো হয়। অনুরোধ পাওয়ার পরপরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেয় এবং দুটি মেডিকেল ইউনিট প্রস্তুত করে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
দুইজন অভিজ্ঞ বার্ন চিকিৎসকের নেতৃত্বে নার্সদের একটি দল মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছাবে বলে জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি বার্ন ট্রিটমেন্ট ইউনিটে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধও পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার পটভূমি ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
সোমবার বিকালে উত্তরার জনবহুল এলাকায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুরুতরভাবে আহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই আহতদের দ্রুত রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত আকস্মিক এবং ভয়াবহ ছিল।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের পরপরই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবকে ফোন করে আহতদের চিকিৎসায় সহায়তার প্রস্তাব দেন। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে সমন্বয় চলে।
মোদির শোকবার্তা ও দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্ঘটনার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং বাংলাদেশের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে ভারত যে কোনও জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলেও জানান।
এই বার্তার পর থেকেই ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ ও সমন্বয় চলতে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা জানানো হয় এবং তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
চিকিৎসকদের দক্ষতা ও সম্ভাব্য প্রভাব
ভারত থেকে আসা চিকিৎসক দলটি দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির অন্যতম প্রখ্যাত বার্ন ইউনিটে কাজ করছেন। তারা দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক মানের অভিজ্ঞতা রাখেন। এ কারণে গুরতর দগ্ধ আহতদের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সহায়তা শুধু চিকিৎসার ক্ষেত্রেই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার একটি শক্ত বার্তা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
আরও সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে
দিল্লি থেকে প্রাথমিক সহায়তার পর বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজন অনুযায়ী আরও চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপের সহায়তা পাঠানোর পর পরিস্থিতি বুঝে দ্বিতীয় দফার প্রস্তুতিও চলছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশ যদি আরও চিকিৎসা সহায়তা চায়, তাহলে ভারত প্রস্তুত রয়েছে। আহতদের বাঁচানোই এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
চিকিৎসা সহায়তায় দ্রুত ও মানবিক পদক্ষেপ প্রশংসনীয়
ঢাকায় বিমান দুর্ঘটনার মতো ভয়াবহ ঘটনার পর ভারতের এই দ্রুত সহায়তা কেবল চিকিৎসা কার্যক্রমে গতি এনে দেবে না, বরং তা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আরেকটি বাস্তব উদাহরণ হিসেবেও রয়ে যাবে।
গুরুতর আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আরও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে। তবে ভারতের এই প্রাথমিক সহায়তা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা প্রাথমিক সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হবে।
এম আর এম – ০৪৬১, Signalbd.com



