প্রযুক্তি

শিগগিরই পৃথিবীর কোটি মানুষের আলাপে সাড়া দেবে চ্যাটজিপিটি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Artificial Intelligence) এখন আর শুধু প্রযুক্তি গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ নেই; বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। এই এআই বিপ্লবের সবচেয়ে আলোচিত নাম হলো চ্যাটজিপিটি (ChatGPT)। সম্প্রতি ওপেনএআইয়ের (OpenAI) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান ঘোষণা দিয়েছেন, খুব শিগগিরই এমন এক সময় আসবে যখন প্রতিদিন পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বলবে। এমনকি এটি হয়তো মানুষের সমস্ত কথোপকথনের চেয়েও বেশি আলাপ করবে।

চ্যাটজিপিটির সূচনা : ইতিহাসের দ্রুততম প্রযুক্তি বিস্তার

চ্যাটজিপিটি প্রথম চালু হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে। অল্প কয়েক মাসের মধ্যে এটি ইতিহাসের দ্রুততম বৃদ্ধি পাওয়া প্রযুক্তি হয়ে ওঠে।

  • মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় দশ লাখ ব্যবহারকারী
  • দুই মাসের মধ্যে ১০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী
  • বর্তমানে (২০২৫ সালে) সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা কয়েক শ’ মিলিয়ন

এই দ্রুত বৃদ্ধি প্রমাণ করে, মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কেবল প্রযুক্তি নয়, বরং জীবনের অপরিহার্য সহায়ক হিসেবে গ্রহণ করছে।

অল্টম্যানের মন্তব্য : মানুষের চেয়েও বেশি আলাপ করবে এআই

সান ফ্রান্সিসকোতে এক সাংবাদিক নৈশভোজে স্যাম অল্টম্যান বলেন—

“যেভাবে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার বাড়ছে, খুব তাড়াতাড়ি কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন এটি ব্যবহার করবে। ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে যখন চ্যাটজিপিটি হয়তো মানুষের সব কথাবার্তার চেয়েও বেশি আলাপ করবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, একটি মডেলের নির্দিষ্ট স্টাইল বা ব্যক্তিত্ব সবার জন্য উপযোগী নয়, তাই ভবিষ্যতে ওপেনএআই বিভিন্ন প্রয়োজন ও কাজের ধরন অনুযায়ী আলাদা সংস্করণ আনবে।

GPT-5 মডেল ও ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া

২০২৫ সালে ওপেনএআই তাদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ মডেল GPT-5 উন্মোচন করে। তবে শুরুর দিকে অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন যে এটি আগের মডেলের মতো বন্ধুসুলভ বা সহায়ক নয়। এছাড়া GPT-5 চালুর সময় পুরনো GPT-4 অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেওয়া হলে ব্যবহারকারীরা তীব্র প্রতিবাদ করেন। পরবর্তীতে ওপেনএআই আবার GPT-4 চালু করতে বাধ্য হয়।

অল্টম্যান স্বীকার করেছেন, নতুন সংস্করণে কথোপকথনের ধরণ পরিবর্তন হওয়ায় অনেক ব্যবহারকারী হতাশ হয়েছেন। তবে শিগগিরই আরও কাস্টমাইজেশনের সুবিধা আসছে, যাতে ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী চ্যাটজিপিটির আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

অর্থনীতি ও বিনিয়োগ : ট্রিলিয়ন ডলারের ভবিষ্যৎ

অল্টম্যান ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এআই পরিচালনার জন্য ভবিষ্যতে ডেটা সেন্টার নির্মাণে ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হবে। যদিও এতে ঝুঁকি রয়েছে, তবুও তিনি বিশ্বাস করেন—

  • কেউ হয়তো প্রচুর অর্থ হারাবে
  • আবার কেউ বিপুল অর্থ উপার্জন করবে
  • সামগ্রিকভাবে এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে

ইতিমধ্যেই ওপেনএআই প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে। কোম্পানির বর্তমান মূল্যায়ন প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার, যা ভবিষ্যতে ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে।

চ্যাটজিপিটির সামাজিক প্রভাব

চ্যাটজিপিটির ব্যবহার এখন আর শুধু লেখালেখি বা প্রশ্নোত্তরেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি—

  • ব্যবসায়িক যোগাযোগ
  • শিক্ষা ও গবেষণা
  • সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
  • স্বাস্থ্যসেবা
  • কনটেন্ট ক্রিয়েশন
  • গ্রাহক সেবা

এসব খাতের কর্মপদ্ধতিকে বদলে দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এআই-নির্ভর সহকারী মানুষের ব্যক্তিগত সহচর হয়ে উঠবে—যেভাবে মোবাইল ফোন এখন আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী।

চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

এআই প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার যেমন সুযোগ তৈরি করছে, তেমনি উদ্বেগও বাড়াচ্ছে।

  • চাকরি হারানোর আশঙ্কা : অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, এআই অনেক কাজ কেড়ে নেবে।
  • ভুল তথ্য ছড়ানো : চ্যাটজিপিটি কখনও কখনও ভ্রান্ত তথ্য দিতে পারে।
  • নৈতিকতা ও গোপনীয়তা : ব্যবহারকারীর ডেটা নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

অল্টম্যান স্বীকার করেছেন, এসব সমস্যা বাস্তব এবং সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ওপেনএআই আগামীতে আরও নতুন ফিচার আনতে যাচ্ছে—

  • ভয়েস কনভারসেশন আরও স্বাভাবিক হবে
  • ভিডিও ও মাল্টিমডাল এআই যুক্ত করা হবে
  • ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী আলাদা ব্যক্তিত্ব তৈরি করা যাবে
  • উন্নত কাস্টমাইজেশন

সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো—পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে প্রযুক্তির আওতায় আনা

চ্যাটজিপিটি এখন শুধু প্রযুক্তি নয়, বরং মানুষের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলছে। স্যাম অল্টম্যানের মতে, ভবিষ্যতে এটি হবে মানুষের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যোগাযোগের মাধ্যম। তবে এর সঙ্গে থাকবে চ্যালেঞ্জ—অর্থনীতি, নৈতিকতা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন।

তবুও একথা নিশ্চিত বলা যায়, চ্যাটজিপিটি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আগামী দিনের পৃথিবীকে এক নতুন রূপ দেবে।

MAH – 12350 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button