বিশ্বের ১০ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক-ইউটিউব ছাড়া)

বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা: ফেসবুক, ইউটিউব ছাড়াও যেসব প্ল্যাটফর্ম শীর্ষে
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা, ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা, তথ্য আদান-প্রদান কিংবা ব্যবসার প্রসার—এসব ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশ্বব্যাপী সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫২৪ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ।
১. ফেসবুক (Facebook)
বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্ল্যাটফর্মের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৩০৭ কোটি। মেটা (Meta) কোম্পানির মালিকানাধীন ফেসবুক বিশ্বজুড়ে ১৩ বছরের উপরে বয়সী প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করেন। ফেসবুকের সহজ ব্যবহার, গ্রুপ, পেজ এবং বিজ্ঞাপনের সুবিধার কারণে এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
২. ইউটিউব (YouTube)
ভিডিও শেয়ারিংয়ে বিশ্বে সেরা, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউটিউবের ব্যবহারকারী সংখ্যা মাসিক বিজ্ঞাপন রিচ হিসেবে ২৫৪ কোটি পর্যন্ত পৌঁছেছে। গুগলের অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশন এর মালিকানাধীন ইউটিউব শুধুমাত্র বিনোদন নয়, শিক্ষা, ব্যবসা, লাইভ স্ট্রিমিং এবং বিপণনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
৩. হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp)
ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক বার্তা বিনিময়ের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয় হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ কোটি। ২০০৯ সালে মেটা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই অ্যাপটি ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা নিশ্চিত করে। ব্যবসায়িক যোগাযোগ ও গ্রুপ চ্যাটের জন্য এটি বহুল ব্যবহৃত।
৪. ইনস্টাগ্রাম (Instagram)
প্রথমে ছবি শেয়ারিংয়ের অ্যাপ হিসেবে শুরু হলেও ইনস্টাগ্রাম এখন সারা বিশ্বে সৃজনশীলতা, ট্রেন্ড এবং ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্ল্যাটফর্মের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী প্রায় ২০০ কোটি। ফ্যাশন, লাইফস্টাইল, খাবার, ভ্রমণসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ইনফ্লুয়েন্সার ও ব্র্যান্ড ইনস্টাগ্রামে ব্যাপক জনপ্রিয়।
৫. টিকটক (TikTok)
ছোট ভিডিও শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে টিকটক। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন এই প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপন রিচ এপ্রিলে ছিল ১৮৪ কোটি। মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী হিসাবে ১৫৯ কোটি মানুষ এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। যুবসমাজের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
৬. উইচ্যাট (WeChat)
চীনের বহুমুখী সামাজিক অ্যাপ উইচ্যাটের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ১৩৯ কোটি। এটি মেসেজিং থেকে শুরু করে মোবাইল পেমেন্ট, অনলাইন শপিং, ভিডিও কলিং এবং আরও অনেক কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও ভারতের মতো কিছু দেশে নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে নিষিদ্ধ।
৭. টেলিগ্রাম (Telegram)
গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার দিক থেকে শক্তিশালী এই মেসেজিং অ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ১০০ কোটি। টেলিগ্রাম বিশেষ করে ব্যবসায়িক যোগাযোগ, এনক্রিপ্টেড চ্যাট ও নানা রকম বট ফিচারের জন্য জনপ্রিয়। তবে কিছুমাত্র দেশে অবৈধ কনটেন্টের অভিযোগে সমালোচিত।
৮. মেসেঞ্জার (Messenger)
ফেসবুকের সঙ্গে সংযুক্ত এই চ্যাটিং প্ল্যাটফর্মের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী প্রায় ৯৫ কোটি। মেসেঞ্জারে চ্যাট, ভয়েস কল ও ভিডিও কলের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব। ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত জীবনের যোগাযোগে এটি ব্যাপক ব্যবহৃত।
৯. স্ন্যাপচ্যাট (Snapchat)
বিশেষ করে কম বয়সীদের মধ্যে জনপ্রিয় স্ন্যাপচ্যাটের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ৮৫ কোটি। এটি স্বল্পস্থায়ী ছবি-ভিডিও শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিনোদন ও যোগাযোগের এক নতুন ধারা নিয়ে এসেছে। ‘স্ন্যাপ ম্যাপ’ ও ‘স্পটলাইট’ ফিচার স্ন্যাপচ্যাটকে অনন্য করে তুলেছে।
১০. দৌউইন (Douyin)
টিকটকের চীনা সংস্করণ দৌউইনের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী সংখ্যা ৭৭ কোটি। ব্যবসায়ী, ইনফ্লুয়েন্সার এবং সাধারণ ব্যবহারকারীরা বিনোদন, ব্র্যান্ড প্রমোশন, হোটেল বুকিং ও ভাইরাল কনটেন্টের জন্য এই অ্যাপ ব্যবহার করেন। বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি তথ্য আদান-প্রদানের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অপরিসীম।
বিশ্বের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন, যা প্রমাণ করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো কিভাবে আমাদের জীবনের প্রতিটি খাতে প্রবেশ করেছে। ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই মাধ্যমগুলোতে গোপনীয়তা, নিরাপত্তা এবং তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও আলোচনা তীব্র হচ্ছে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন সোশ্যাল মিডিয়াকে নিরাপদ ও কার্যকর?
১. গোপনীয়তা রক্ষা: এনক্রিপ্টেড মেসেজিং ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া।
২. বিষয়বস্তুর যাচাই: সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্য যাচাই করে গ্রহণ করা।
৩. ডিজিটাল শিক্ষার গুরুত্ব: বিভিন্ন বয়সী মানুষের জন্য ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. ব্যবসায়িক সুযোগ: সৃজনশীলতা ও মার্কেটিংয়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের সর্বোচ্চ ব্যবহার।
ফেসবুক, ইউটিউব ছাড়াও বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রচুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সক্রিয় রয়েছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, ব্যবহারকারী সংখ্যা ও জনপ্রিয়তা ভিন্ন হলেও এরা সবাই ডিজিটাল পৃথিবীতে আমাদের সংযোগের অন্যতম মাধ্যম। নিরাপদ, সুষ্ঠু ও সচেতন ব্যবহার নিশ্চিত করলে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।