এআই খেয়ে নিচ্ছে সাড়ে ৯ কোটি মানুষের চাকরি

বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে নেমেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝড়। এআইয়ের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষের পেশা। বিশ্ব অর্থনীতি কীভাবে এই পরিবর্তন সামাল দেবে — সেই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।
এআইয়ের আগ্রাসনে ধ্বংসের মুখে কোটি কোটি চাকরি
২০২৫ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এক রুদ্ধশ্বাস চিত্র। তাদের মতে, এ বছরেই প্রায় সাড়ে ৯ কোটি চাকরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তবে একইসঙ্গে আশার আলোও দেখাচ্ছে সমীক্ষাটি— নতুনভাবে সৃষ্টি হতে পারে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি চাকরি।
প্রযুক্তি যেভাবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে, তাতে শ্রমনির্ভর ও নিয়মভিত্তিক অনেক কাজই মানুষের বদলে এআই ও অটোমেশন সম্পন্ন করতে পারবে — অধিক গতি, কম খরচ আর নির্ভুলতা দিয়েই।
কীভাবে এআই চাকরির বাজারে দখল নিচ্ছে?
এআই এখন শুধু তথ্য বিশ্লেষণ নয় —
- কনটেন্ট লেখা,
- গ্রাফিক ডিজাইন,
- ডেটা এন্ট্রি,
- গ্রাহকসেবা,
- হিসাবরক্ষণ,
- এমনকি বিমা ও স্বাস্থ্যবীমা খাতেও এআই ব্যবহার বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব কাজ পুনরাবৃত্তিমূলক এবং স্ক্রিপ্ট নির্ভর, সেসবই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। যেমন:
- জুনিয়র অ্যানালিস্ট
- রিপোর্ট রাইটার
- হিসাবরক্ষক
- রেডিয়োলজিস্ট
- কাস্টমার কেয়ার এজেন্ট
- ডেটা এন্ট্রি অপারেটর
মানুষের জায়গা দখলে প্রস্তুত যন্ত্রবুদ্ধি
বর্তমানে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম ও স্টার্টআপ সংস্থা পুরোপুরি এআইনির্ভর হতে শুরু করেছে। একটি লেখার কাজ, যা একজন কনটেন্ট রাইটারের জন্য ১ ঘণ্টা সময় নেয়, সেটি একটি চ্যাটবট মাত্র ১ মিনিটেই করে দিতে পারে।
এমনকি গ্রাফিক ডিজাইনিং, ভিডিও এডিটিং এবং মার্কেটিং কনটেন্ট তৈরি — সবকিছুতেই এআই নির্ভরতা বাড়ছে। ফলে মানবসম্পদের প্রয়োজন দ্রুত কমছে।
তবে সব খাতে কি চাকরি হারানোর শঙ্কা?
না। সবক্ষেত্রে এমন ধ্বংসাত্মক প্রভাব নেই। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এআই যতই আধিপত্য বিস্তার করুক না কেন, কিছু চাকরি তুলনামূলকভাবে ‘নিরাপদ’।
সেগুলো হলো:
- কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন
- শিক্ষাদান
- স্বাস্থ্যসেবা (নার্সিং, থেরাপিস্ট, মনোরোগবিদ্যা)
- সমাজসেবা ও কেয়ার ওয়ার্ক
- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
- নির্মাণকর্মী
- কল মিস্ত্রি ও মেকানিক
এই পেশাগুলোতে মানবিক সংযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সহানুভূতি ও শারীরিক দক্ষতা প্রয়োজন হয়, যা এখনো পর্যন্ত যন্ত্রবুদ্ধি দিয়ে প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়।
পরিসংখ্যান যা ভাবায়
- ৯৪ মিলিয়ন (৯ কোটির বেশি) চাকরি এআই দখলে যেতে পারে ২০২৫ সালের মধ্যেই
- ৭৫ মিলিয়ন চাকরি নতুনভাবে সৃষ্টি হতে পারে প্রযুক্তিনির্ভর খাতে
- বিশ্বের ১০০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের উপর চালানো সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৪% কর্মসংস্থান একেবারে রূপান্তরিত হয়ে যাবে
- সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা: বীমা সহকারী, কনটেন্ট লেখক, হিসাবরক্ষক, গ্রাহক সহায়তা, ডেটা এন্ট্রি
কাদের কাজ থাকবে, কাদের থাকবে না?
সমীক্ষায় ৩টি শ্রেণির কথা বলা হয়েছে:
- সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে থাকা পেশা – অটোমেশন যেগুলো সহজেই করতে পারে
- রূপান্তরের মুখে থাকা পেশা – যেখানে মানুষ ও প্রযুক্তি একসঙ্গে কাজ করবে
- নিরাপদ পেশা – যেখানে মানুষের জায়গা যন্ত্র নিতে পারবে না সহজে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “যেসব কাজের জন্য আবেগ, সামাজিক বোঝাপড়া ও শারীরিক পরিশ্রম লাগে, সেগুলো এখনো যন্ত্রের পক্ষে কভার করা কঠিন।”
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি: কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি:
- এআই, মেশিন লার্নিং ও ডেটা বিশ্লেষণে দক্ষতা অর্জন
- প্রযুক্তিগত শিক্ষায় সময় ও বিনিয়োগ বাড়ানো
- সৃজনশীলতা ও কৌশলগত চিন্তাভাবনার দক্ষতা বাড়ানো
- হাইব্রিড স্কিল সেট তৈরি করা — টেকনিক্যাল + হিউম্যান স্কিল
“প্রযুক্তি কখনোই চাকরি পুরোপুরি শেষ করে না, তবে কাজের ধরন বদলে দেয় — এবং এতে টিকে থাকতে হলে পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে শিখতে হবে”—একজন প্রযুক্তি বিশ্লেষক
ভয় না করে প্রস্তুতি নিন
এআই-এর দাপটে চাকরির বাজারে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে ভয় নয় — এই পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলা এখনই সময়ের দাবি।
শুধু প্রযুক্তিকে ভয় না করে, তাকে নিজের দক্ষতার অংশ করে তুলতে পারলে — ভবিষ্যতের চাকরি আপনার হাতেই থাকবে।
এম আর এম – ০১৫০, Signalbd.com