
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি জানিয়েছেন যে তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পছন্দ করেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মেলানিয়া বেশ হতাশ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। রাজনৈতিক পডকাস্ট ‘পড ফোর্স ওয়ান’-এর এক পর্বে এ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলেন ট্রাম্প।
পডকাস্টে ট্রাম্পের মন্তব্য
মঙ্গলবার সম্প্রচারিত মার্কিন রাজনৈতিক পডকাস্ট ‘পড ফোর্স ওয়ান’-এর সাম্প্রতিক পর্বে অংশ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমরা পুতিনকে চিনি এবং মেলানিয়া তাকে পছন্দ করেন। আমি জানি না কেন, কিন্তু তিনি তাকে সবসময়ই সম্মান করেন।”
তবে এর পরই তিনি যোগ করেন, “কিন্তু রাশিয়ার কিয়েভে বোমা হামলার খবর শুনে তিনি হতাশ হয়েছেন। পুতিনের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে সম্মান থাকলেও যুদ্ধের বিষয়টি তাকে কষ্ট দিয়েছে।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্য দ্রুতই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন তোলে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অচলাবস্থা ঘিরে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এই মন্তব্য।
রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থান
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন। তিনি বহুবার বলেছেন, রাশিয়া এবং পুতিন উভয়কেই তিনি সম্মান করেন এবং যুদ্ধের পরিবর্তে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি।
তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে শান্তি আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্প খোলাখুলিভাবে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এমনকি মস্কোর ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
যুদ্ধবিরতির সময়সীমা নিয়ে ট্রাম্পের সতর্কবার্তা
এর আগেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন যে, ইউক্রেন সংকট সমাধানে রাশিয়ার জন্য নির্ধারিত ৫০ দিনের সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আজ থেকে আর ১০ বা ১২ দিন বাকি।”
তিনি আরও জানান, “এই সময়সীমার মধ্যে সমাধান না হলে আমরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং সেকেন্ডারি ট্যারিফের পথ অবলম্বন করতে বাধ্য হব।”
ট্রাম্পের মতে, যদি আগেই বোঝা যায় চুক্তির ফল কী হবে, তবে অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কয়েক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
মেলানিয়ার প্রতিক্রিয়া: ব্যক্তিগত মতামত না রাজনৈতিক অবস্থান?
ট্রাম্পের বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে যে, মেলানিয়া ট্রাম্প পুতিনের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও, রাশিয়ার সাম্প্রতিক যুদ্ধনীতি তাকে হতাশ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন ফার্স্ট লেডির এই মনোভাব হয়তো সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রতিফলিত করে, যেখানে ব্যক্তিত্বকে সম্মান করা হয় কিন্তু যুদ্ধকে সমর্থন করা হয় না।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের মন্তব্যের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই মন্তব্য হয়তো রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে।
কেউ কেউ আবার মনে করছেন, এটি কেবল ব্যক্তিগত মতামত হলেও মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে?
বর্তমান সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। ট্রাম্প প্রশাসন একদিকে যেমন কূটনৈতিক সমাধানের কথা বলছে, অন্যদিকে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা কমিয়ে দিয়ে চাপও সৃষ্টি করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া হতে পারে। এতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
শেষ কথা
ট্রাম্পের এই মন্তব্যে একদিকে যেমন ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয় উঠে এসেছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিলতাও ফুটে উঠেছে। মেলানিয়া ট্রাম্পের পুতিনের প্রতি সম্মান এবং যুদ্ধ নিয়ে হতাশা বিষয়টিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং রাশিয়ার সিদ্ধান্তের ওপর।
এম আর এম – ০৬১৯ , Signalbd.com