ট্রাম্প বললেন, টিকটক বিক্রির জন্য একজন ধনী ক্রেতা পেয়েছেন

মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক (TikTok)-এর জন্য একজন সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজে পেয়েছেন, যিনি ‘অত্যন্ত ধনী’। ট্রাম্প আরও বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সেই সম্ভাব্য ক্রেতার পরিচয় প্রকাশ করা হবে। চূড়ান্ত চুক্তির আগে চীনের সম্মতিও প্রয়োজন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
রবিবার (২৯ জুন) ফক্স নিউজের “সানডে মর্নিং ফিউচারস উইথ মারিয়া বার্টিরোমো” অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আমরা একজন দুর্দান্ত, ধনী ক্রেতা পেয়েছি। আশা করছি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চুক্তির অনুমোদন দেবেন।”
টিকটকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কেন এত কঠোর?
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাস হওয়া এক আইনের আওতায়, চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাইটডান্স (ByteDance) যদি টিকটক-এর মার্কিন ব্যবসা বিক্রি না করে কিংবা যথেষ্ট অগ্রগতি না দেখায়, তাহলে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির মধ্যে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হবে। মার্কিন সরকার মনে করে, টিকটকের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চীনা সরকারের হাতে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
টিকটক বিক্রির সময়সীমা আবারও বাড়ালেন ট্রাম্প
ট্রাম্প এর আগে তিনবার টিকটক বিক্রির সময়সীমা বাড়িয়েছেন। সর্বশেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। এর মধ্যেই বাইটডান্সকে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র শাখার মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানির হাতে তুলে দিতে হবে।
পূর্বের চুক্তি কেন ভেঙে গেল?
২০২৪ সালের বসন্তে একটি সম্ভাব্য চুক্তির কথা সামনে আসে, যেখানে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র শাখা একটি নতুন মার্কিন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হতো। মালিকানা থাকত মূলত মার্কিন বিনিয়োগকারীদের হাতে। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করে। চীন পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে দেয়, তারা ওই চুক্তি অনুমোদন করবে না। ফলে আলোচিত চুক্তিটি স্থগিত হয়ে যায়।
নতুন ক্রেতা কে হতে পারেন?
ট্রাম্প সম্ভাব্য ক্রেতার নাম প্রকাশ না করলেও প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ জগতে গুঞ্জন উঠেছে যে, সম্ভাব্য ক্রেতার তালিকায় রয়েছে:
- ল্যারি এলিসন (Larry Ellison) – ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা
- এলন মাস্ক (Elon Musk) – টেসলা ও এক্স-এর মালিক
- মার্ক আন্দ্রেসেন ও বেন হরোভিটজ – সিলিকন ভ্যালির বিশিষ্ট ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট
অনেকেই মনে করছেন, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে কেউ একজন এই চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেন, কারণ TikTok-এর মার্কিন বাজারে প্রভাব এখনো ব্যাপক।
টিকটককে ঘিরে তরুণ ভোটারদের প্রভাব
ট্রাম্প জানান, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টিকটক তাঁর পক্ষে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। তরুণ ভোটারদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা কিছুটা বেড়েছে টিকটকের মাধ্যমেই। এই বিষয়টি তাঁকে TikTok-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, “টিকটক আমাদের অনেক তরুণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। ওটা এখন শুধু একটি অ্যাপ না, বরং একটি সাংস্কৃতিক শক্তি।”
চীনের অবস্থান কী?
চীনা সরকার এর আগে জানিয়েছে, টিকটকের মতো প্রযুক্তি কোম্পানির বিদেশে মালিকানা বিক্রি তাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। তাই বাইটডান্সের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য চীনা সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে টিকটকের অ্যালগরিদম ও ব্যবহারকারী ডেটা নিয়ে চীন খুবই সংবেদনশীল।
বিশ্বজুড়ে টিকটক নিয়ে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারত, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বহু দেশ টিকটক নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিছু দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি মোবাইল থেকে টিকটক নিষিদ্ধও করা হয়েছে।
ভারত ২০২০ সালেই টিকটক সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ কিছুবার প্ল্যাটফর্মটির ডেটা সুরক্ষা নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য মার্কিন রাজনীতিতে ও প্রযুক্তি খাতে একটি বড় মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে। প্রযুক্তি বিশ্লেষক ড্যান ইভস বলেন, “টিকটকের মার্কিন ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক দোলাচলে রয়েছে। এই মুহূর্তে কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না, এই চুক্তি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।”
টিকটক এখন শুধু একটি অ্যাপ নয়, এটি বিশ্বব্যাপী তরুণ সমাজের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্রে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সেই ‘ধনী ক্রেতা’র পরিচয় প্রকাশ পেলে পরিস্থিতি আরও পরিষ্কার হবে। এরই মধ্যে বিশ্ব প্রযুক্তি বাজারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে টিকটক বিক্রির ভবিষ্যৎ।