মাইক্রোসফটের বদলে গুগলের সার্ভার ব্যবহার করবে চ্যাটজিপিটি

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের অন্যতম বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মাইক্রোসফট। আর তাই চ্যাটজিপিটি চালুর পর থেকেই মাইক্রোসফটের অ্যাজুর ক্লাউড অবকাঠামো ও সার্ভার ব্যবহার করে আসছে ওপেনএআই। তবে সম্প্রতি ওপেনএআই তাদের মাইক্রোসফটের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমাতে চাইছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির দৌড়ে গুগল ও ওপেনএআই দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও চ্যাটজিপিটির কার্যক্রম পরিচালনায় গুগলের ক্লাউড অবকাঠামো ও সার্ভার ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে ওপেনএআই।
চুক্তির কারণ ও প্রেক্ষাপট:
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এআই মডেল পরিচালনার জন্য গত মাসে গুগলের সঙ্গে চুক্তি করেছে ওপেনএআই। চুক্তির আওতায় গুগল তাদের ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড সেবায় ‘অতিরিক্ত কম্পিউটিং সক্ষমতা’ দেবে ওপেনএআইকে। যদিও দুই প্রতিষ্ঠান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি ভবিষ্যতের এআই উন্নয়ন ও নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এত দিন চ্যাটজিপিটি মূলত মাইক্রোসফটের অ্যাজুর ক্লাউড অবকাঠামোর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে পরিচালিত হতো। তাই ওপেনএআই এতদিন অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সার্ভার ব্যবহার করতে পারেনি। গত জানুয়ারি মাসে এই একচেটিয়া চুক্তির সীমাবদ্ধতা শেষ হওয়ার পর ওপেনএআই নতুন অংশীদার খুঁজতে শুরু করে। তবে চ্যাটজিপিটি পুরোপুরি গুগলের সার্ভার ব্যবহার করবে, না মাইক্রোসফট ও গুগলের সার্ভার যৌথভাবে ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।
নির্ভরতা কমানোর কারণ ও সুবিধা:
সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চ্যাটজিপিটি বড় ধরনের প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের মুখে পড়েছে। এই বিভ্রাটগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট অবকাঠামোর ওপর পুরোপুরি নির্ভরতা চ্যাটজিপিটির নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে একাধিক ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করলে চ্যাটজিপিটির কার্যক্রম চালু রাখা অনেক সহজ হবে। এতে যেকোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা সিস্টেম সমস্যার ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগও মিলবে।
একাধিক ক্লাউড সরবরাহকারীর ব্যবহার ওপেনএআইকে আরও বেশি স্থিতিশীলতা এবং নির্ভরযোগ্যতা দেবে। যদি একটি ক্লাউড সরবরাহকারী কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়, তবে চ্যাটজিপিটি সহজেই অন্য ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হতে পারবে, যা সেবার নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করবে। এটি ব্যবহারকারীদের কাছে চ্যাটজিপিটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে এবং তাদের আস্থা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, একাধিক ক্লাউড সরবরাহকারী ব্যবহার করার ফলে ওপেনএআই তাদের কম্পিউটিং ক্ষমতা এবং ডেটা স্টোরেজের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের সুবিধা পাবে। এটি দীর্ঘমেয়াদে তাদের অপারেটিং খরচ কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিভিন্ন ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে ভিন্ন ভিন্ন পরিষেবা এবং বৈশিষ্ট্য থাকে, যা ওপেনএআইকে তাদের এআই মডেলের উন্নয়নে আরও নমনীয়তা এবং উদ্ভাবনের সুযোগ দেবে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাকি সহযোগিতা?
যদিও গুগল ও ওপেনএআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির বাজারে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বী, তবে এই চুক্তি তাদের মধ্যে এক নতুন ধরনের সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়। এটি দেখায় যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকলেও, বৃহৎ মডেল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল কম্পিউটিং ক্ষমতা এবং অবকাঠামোগত সহায়তার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোও একে অপরের সাথে সহযোগিতা করতে পারে। এই চুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, যেখানে সহযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা একই সাথে বিদ্যমান থাকবে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব:
এই চুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এটি শুধু ওপেনএআইয়ের জন্য নয়, বরং সমগ্র এআই শিল্পের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যতে অন্যান্য এআই কোম্পানিগুলোও তাদের নিজস্ব ঝুঁকি কমানোর জন্য এবং উচ্চতর নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য একাধিক ক্লাউড সরবরাহকারী ব্যবহারের দিকে ঝুঁকতে পারে। এটি ক্লাউড কম্পিউটিং শিল্পেও একটি নতুন প্রবণতা তৈরি করতে পারে, যেখানে বড় এআই মডেলগুলোর জন্য বিশেষায়িত ক্লাউড পরিষেবাগুলোর চাহিদা বাড়বে।
এই পদক্ষেপ ওপেনএআইকে আরও শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য করে তুলবে, যা তাদের ভবিষ্যৎ এআই মডেলগুলোর উন্নয়নে সহায়তা করবে এবং বাজারে তাদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করবে। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য আরও স্থিতিশীল এবং উন্নত এআই পরিষেবা নিশ্চিত করবে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।