আঞ্চলিক

টাঙ্গাইল রেলস্টেশনের পাশে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার ৩

টাঙ্গাইল রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে ভুলবশত ভিন্ন ট্রেনে উঠে পড়া ওই নারী টাঙ্গাইলে নেমে পড়লে এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভুল ট্রেন থেকে অপরাধের ফাঁদে

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থেকে একজন নারী ঢাকা এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে পৌঁছান। সেখান থেকে ভুল করে তিনি উত্তরবঙ্গগামী দ্রুতযান ট্রেনে উঠে পড়েন। যাত্রীদের মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি ভুল ট্রেনে উঠে টাঙ্গাইলে চলে এসেছেন।

রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে তিনি স্টেশনে নেমে রেলওয়ে পুলিশকে ঘটনাটি জানান। সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে একজন সিএনজি চালককে দায়িত্ব দেওয়া হয় যেন তিনি তাকে ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেন। কিন্তু এরপরই ঘটে ভয়ংকর ঘটনা।

পুলিশ যা বলছে: স্টেশন থেকে কাঠবাগান হয়ে একটি বাড়ি

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত সিএনজি চালক দুলাল চন্দ্র ওই নারীকে ঢাকার ট্রেনে তুলতে না নিয়ে প্রথমে স্টেশনের পাশের কাঠবাগান এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে। পরে রুপু মিয়া ও সজিব খান নামে আরও দুজনকে ডেকে নিয়ে আসা হয় এবং তাকে স্টেশনের নিকটবর্তী ব্রাহ্মণকুশিয়া এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়।

পরবর্তীতে ভোরের দিকে ভুক্তভোগী সাহস করে রেল পুলিশকে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে শনিবার সকালে ওই তিনজনকে নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতদের পরিচয়

গ্রেফতার হওয়া তিনজন হলেন
১. দুলাল চন্দ্র দাশ (২৮) – পিতা সেন্টু চন্দ্র দাশ, ব্রাহ্মণকুশিয়া সুতারপাড়া, টাঙ্গাইল সদর
২. রুপু মিয়া (২৭) – পিতা মৃত কিসমত মিয়া
৩. সজিব খান (১৯) – পিতা হালিম খান

তিনজনই পেশায় সিএনজি চালক। তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।

স্থানীয় মানুষের প্রতিক্রিয়া

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে একজন অসহায় নারীকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অপরাধীদের হাতে তুলে দেওয়া হলো। স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কড়া নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা

ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে ইতোমধ্যেই টাঙ্গাইল রেলওয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। পুলিশ বলেছে, ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।

পুলিশের বক্তব্য

টাঙ্গাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ জানিয়েছেন, “অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের আদালতে পাঠানো হবে। এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পটভূমি: যাত্রী নিরাপত্তায় প্রশ্ন

রেলস্টেশনগুলোতে যাত্রী বিশেষ করে নারী যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে বহুদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে। স্টেশন এলাকায় আলোকসজ্জার অভাব, পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীর অভাব ও সিসিটিভি ক্যামেরার অপ্রতুলতা বারবার এমন অপরাধের সুযোগ করে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা রোধে অবিলম্বে স্টেশন এলাকায় আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।

পরবর্তী পদক্ষেপ

গ্রেফতার হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করা হবে। এছাড়া ভুক্তভোগীর চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার বিষয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, রেলস্টেশনে যাত্রী নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে।

শেষ কথা 

একটি ভুল ট্রেন ধরার কারণে একজন নারী যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হলেন, তা পুরো দেশকে নাড়া দিয়েছে। এই ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন থেকেই যায়, ভবিষ্যতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে?

এম আর এম – ০৫১৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button