নেতানিয়াহুকে বিদায় দিতে হবে, বললেন সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী

ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বললেন, দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভাজনের জন্য নেতানিয়াহুকে দায়ী করে বেনেট টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই কঠোর মন্তব্য করেন।
বেনেট, যিনি ২০২১ সালে নেতানিয়াহুর দীর্ঘ ১২ বছরের শাসন অবসান করে জোট সরকারের নেতৃত্ব দেন, আজও ইসরায়েলের রাজনীতিতে প্রভাবশালী এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত। তার বক্তব্য, নেতানিয়াহুর প্রায় দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা সময়টি ‘অত্যধিক দীর্ঘ’ এবং ইসরায়েলি সমাজের বিভক্তির জন্য প্রধানত তার দায় রয়েছে।
নেতানিয়াহুর দীর্ঘ শাসন ও বেনেটের বিরোধিতা
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০০৯ সাল থেকে ইসরায়েলের ক্ষমতায় আছেন, একাধিক দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালে বেনেট ও অন্যান্য বিরোধী দলের জোট গড়ে তার টানা ১২ বছরের শাসন পরবর্তী বিরাম ঘটে। সেই সময়ে বেনেট ‘জোট সরকার’ গড়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন, কিন্তু এই জোট সরকার প্রায় এক বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়ে। এরপর কট্টর ডানপন্থী ও ইহুদি দলগুলোর সমর্থনে নেতানিয়াহু আবারও ক্ষমতায় আসেন।
বেনেট বলেছেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকা ইসরায়েলি সমাজের জন্য ভাল হয়নি। তার দীর্ঘ শাসন সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, যা দেশকে আরও দুর্বল করেছে।”
গাজা যুদ্ধ ও নেতানিয়াহুর সমালোচনা
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গাজায় চলমান সংঘর্ষে নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বেনেট। তিনি বলেন, “গাজায় যুদ্ধ পরিচালনায় সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা স্পষ্ট।” বেনেটের মতে, গাজায় বন্দি থাকা নিরীহ মানুষদের মুক্তির জন্য একটি ‘সমন্বিত’ চুক্তি করা জরুরি, যা সরকারের দেরির কারণে সম্ভব হচ্ছে না।
বেনেট আরও বলেন, “হামাসকে নির্মূল করার দায়িত্ব ভবিষ্যতের সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এখনকার সরকার যেখানে সমস্যায় জর্জরিত, সেখানে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন।”
ইরানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপে বেনেটের অবদান
বেনেট দাবি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনার ওপর যে হামলা হয়েছে, তার পেছনে তারই পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব ছিল। তিনি বলেছেন, “আমার নেতৃত্বাধীন স্বল্পস্থায়ী সরকার যদি আগে থেকে প্রস্তুতি না নেয়, তাহলে এই হামলা সম্ভব হত না।” বেনেট ইরানের বিরুদ্ধে এই হামলার প্রয়োজনীয়তা ও সফলতা নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন।
বেনেটের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ: ফেরার সম্ভাবনা?
রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে থাকা বেনেটের আবারও ফিরে আসার গুঞ্জন জোরালো হয়েছে। সাম্প্রতিক জনমত জরিপ বলছে, তিনি যদি নির্বাচন করেন, তাহলে নেতানিয়াহুকে পরাজিত করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ২০২৬ সালের শেষভাগের আগে কোনো নির্বাচনের পরিকল্পনা নেই বলে জানানো হয়েছে।
বেনেট নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেননি, তবে তার রাজনৈতিক পুনরাগমন নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ইসরায়েলি রাজনীতি ও নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ: বিশ্লেষণ
ইসরায়েলি রাজনীতিতে নেতানিয়াহু সর্বাধিক বিতর্কিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার সমর্থকরা তাকে শক্তিশালী নেতৃত্ব হিসেবে দেখে থাকেন, বিশেষ করে নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে। কিন্তু তার বিরোধীরা বলেন, তার শাসন ক্ষমতায় দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক বিভাজন গভীর হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাজা সঙ্কট, ইরানের পারমাণবিক হুমকি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে নেতানিয়াহুর সরকার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিল। এই সংকট মোকাবেলায় তার সিদ্ধান্ত ও নীতি নিয়ে নানা মতবিরোধ রয়েছে।
বেনেটের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞান ও শাসনক্ষমতার বিরোধী। বেনেটের জন্য এটি একটি রাজনৈতিক সুযোগও হতে পারে, যদি তিনি আবার সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।