স্টারলিংক ইন্টারনেট বিভ্রাট, ২.৫ ঘণ্টা বিশ্বব্যাপী বন্ধ

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক বৃহস্পতিবার বিকেল আড়াই ঘণ্টা ধরে সারা বিশ্বের ব্যবহারকারীদের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ রাখে। স্পেসএক্সের এই সেবা বিশ্বজুড়ে যেসব দেশ ও অঞ্চলে চালু আছে, সেখানে মিলিয়ে প্রায় ৬০ লাখেরও বেশি গ্রাহক এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। এই দীর্ঘস্থায়ী বিভ্রাট নেটওয়ার্কে নতুন করে সতর্কবার্তা হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট বিভ্রাটের বিস্তারিত
২৫ জুলাই, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ১টা ৩০ মিনিটের কাছাকাছি স্টারলিংক ব্যবহারকারীরা হঠাৎ করেই ইন্টারনেটে প্রবেশ করতে না পারার অভিযোগ করতে শুরু করেন। ‘অপ্টিমাইজিং কানেকশন’ বা ‘অফলাইন’ নামের বার্তা স্ক্রিনে দেখতে পান ব্যবহারকারীরা। এর পর দুপুর ২টা ০৫ মিনিটে স্টারলিংক অফিসিয়াল টুইটার ও এক্স (X) প্ল্যাটফর্মে ঘোষণা দেয়, তারা নেটওয়ার্কের গড়বড় নিয়ে সচেতন এবং সমস্যার সমাধানে কাজ করছে।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরই ধীরে ধীরে পরিষেবা পুনরুদ্ধার হয়। তবে এই দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা অনেক গ্রাহকের দৈনন্দিন কাজ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় ধরণের প্রভাব ফেলে।
বিভ্রাটের কারণ ও স্টারলিংকের প্রতিক্রিয়া
স্টারলিংক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল নিকোলস এক্স-এ দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন,
“আমাদের নেটওয়ার্ক প্রায় পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়েছে। বিভ্রাটটি মূলত অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার সার্ভিসগুলোর ব্যর্থতার কারণে হয়েছিল। আমরা এই সমস্যার জন্য গভীরভাবে দুঃখিত এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন সমস্যা আর না ঘটে, তার জন্য মূল কারণ খুঁজে বের করে তা নিরসন করব।”
স্পেসএক্সের প্রধান ও টেসলা সিইও ইলন মাস্কও একই দিনে টুইট করে বিভ্রাটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান,
“পরিষেবা দ্রুত পুনরুদ্ধার করা হবে। আমরা সমস্যার মূলে গিয়ে তা সমাধান করব, যাতে ভবিষ্যতে এমন বিভ্রাট না হয়।”
স্টারলিংক কি? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
স্টারলিংক হচ্ছে স্পেসএক্সের উন্নত স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রত্যন্ত ও দুর্বল সংযোগযুক্ত অঞ্চলেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে। এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে সারা বিশ্বে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
বর্তমানে স্টারলিংকের প্রায় ৭,৮০০টির বেশি স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে, এবং এই স্যাটেলাইটগুলো একসাথে মিলিয়ে বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ, অঞ্চল ও দ্বীপে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। বাংলাদেশও তাদের সেই সেবাভুক্ত দেশের মধ্যে অন্যতম।
২০২৪ সালের ১২ আগস্ট থেকে শ্রীলঙ্কা সরকার স্টারলিংককে ৫ বছরের জন্য দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা চালানোর অনুমোদন দিয়েছে। এর মাধ্যমে সেখানকার গ্রামীণ ও দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে উন্নত নেটওয়ার্ক সেবা নিশ্চিত হয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য স্টারলিংক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত, নদীমাতৃক ও পাহাড়ি অঞ্চলে দ্রুত ও স্থায়ী ইন্টারনেট সেবার অভাব বেশ পুরোনো সমস্যা। সেখানে স্থাপিত ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক সময় দুর্বল বা সম্পূর্ণ অচল থাকে।
স্টারলিংকের মাধ্যমে এই জায়গাগুলোতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পেয়ে মানুষ ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে সংযুক্ত থাকার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, কৃষি এবং জরুরি পরিষেবা প্রদানে এর ভূমিকা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এই কারণে বাংলাদেশের নানান সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা স্টারলিংক সেবা ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে।
বিভ্রাটের প্রভাব: ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া ও ব্যবসায়িক ক্ষতি
স্টারলিংক সেবায় দীর্ঘস্থায়ী বিভ্রাটের কারণে ব্যবহারকারীরা অসুবিধায় পড়েছে। ব্যক্তিগত গ্রাহক থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও অনলাইনে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
অনেক ব্যবহারকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, টিমওয়ার্ক এবং অনলাইন লেনদেনের সময় এই বিঘ্নের ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
একাধিক অনলাইন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তাদের ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ ও লেনদেন স্থগিত থাকায় ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে।
ভবিষ্যতে কি করা উচিত?
স্টারলিংকের মত উন্নত প্রযুক্তি সেবাগুলোতে এমন বিভ্রাট অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেওয়া দরকার। স্পেসএক্স ও স্টারলিংক কর্তৃপক্ষকে এখন আরও শক্তিশালী ব্যাকআপ সিস্টেম, উন্নত সফটওয়্যার নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নির্ভর করছে এই নেটওয়ার্কের ওপর। এর ফলে একবিন্দুতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি সামগ্রিক কার্যক্রমকে স্থবির করে দিতে পারে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও এই ধরনের সেবা ব্যবহারে সচেতনতা বাড়িয়ে নিতে পারে এবং বিকল্প ইন্টারনেট উৎস প্রস্তুত রাখতে হবে।
সারসংক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
- বিভ্রাটের সময়: ২৫ জুলাই ২০২৫, বিকেল ১:৩০ থেকে ৩:৫৫ পর্যন্ত
- কারণ: অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার পরিষেবার ব্যর্থতা
- প্রভাব: বিশ্বব্যাপী ৬০ লাখের বেশি ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন
- স্টারলিংকের প্রতিশ্রুতি: দ্রুত সমাধান ও ভবিষ্যতে নিরাপত্তা বাড়ানো
- বাংলাদেশে: শ্রীলঙ্কার পর বাংলাদেশসহ ১৪০+ দেশে সেবা প্রদান চলছে
- প্রতিবন্ধকতা: ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় ধরনের ক্ষতি