চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সরাসরি পাইপলাইনে তেল পরিবহন শুরু

সম্পূর্ণ সংবাদ পুনর্লিখন
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্থাপিত হতে যাচ্ছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হচ্ছে। আগামী শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫ তারিখে, পতেঙ্গার ডেসপাস টার্মিনাল থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত এই অত্যাধুনিক তেল পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
৬ বছরের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন
এই মহাপরিকল্পনার যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালে। সে সময় সরকার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরবরাহের প্রকল্প গ্রহণ করে। দীর্ঘ পরিকল্পনা, নির্মাণ এবং সফল পরীক্ষামূলক অপারেশনের পর অবশেষে প্রকল্পের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাইপলাইন চালু হলে জ্বালানি পরিবহনের ব্যয় কমে আসবে, তেলের অপচয় বন্ধ হবে এবং বছরে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এর ফলে জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা হবে।
পুরনো নৌপথের সীমাবদ্ধতা
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার ডিপোতে তেল সরবরাহ হতো নৌপথে শতাধিক কোস্টাল ট্যাংকারের মাধ্যমে। এতে সময় লাগত প্রায় ৪৮ ঘণ্টা, আর খারাপ আবহাওয়ায় পরিবহন ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি ছিল সবসময়। নতুন পাইপলাইন ব্যবস্থায় মাত্র ১২ ঘণ্টায় তেল পৌঁছানো যাবে এবং যেকোনো আবহাওয়ায় সরবরাহ চলমান থাকবে।
পাইপলাইনের প্রযুক্তিগত বিবরণ
- মোট দৈর্ঘ্য: ২৪২ কিলোমিটার (পতেঙ্গা থেকে গোদনাইল) + অতিরিক্ত ৮.২৯ কিমি (গোদনাইল থেকে ফতুল্লা)
- পাইপ ব্যাস: মূল লাইনে ১৬ ইঞ্চি, ফতুল্লা অংশে ১০ ইঞ্চি
- পরিবহন ক্ষমতা: প্রতি ঘণ্টায় ২৬০–২৮০ টন ডিজেল (সর্বোচ্চ ৩২০ টন)
- বার্ষিক পরিবহন সক্ষমতা: ৫০ লাখ টন
- স্টেশন সংখ্যা: ৯টি
- নদী পারাপার: ২২টি নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন স্থাপন
- অতিরিক্ত প্রযুক্তি: স্ক্যাডা সিস্টেম, টেলিকমিউনিকেশন, লিক ডিটেকশন, অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ
নতুন ডিপো ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা
প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লার বরুড়ায় নতুন একটি ২১ হাজার টনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ডিপো নির্মাণ করা হয়েছে। এতে জ্বালানি সংরক্ষণের ক্ষমতা বাড়বে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে।
পরীক্ষামূলক সাফল্য
গত ২২ জুন, পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ১৮–২০ হাজার টন ডিজেল পাইপলাইনে নারায়ণগঞ্জে পাঠানো হয়। এরপর মেঘনা অয়েল কোম্পানির ১৬–১৮ হাজার টন ডিজেল পরিবহন করা হয়। সব কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় স্ক্রিনে মনিটর করা হয়েছে, এবং কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি।
প্রকল্পের অর্থনৈতিক দিক
- মোট ব্যয়: প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা
- বার্ষিক আয়: ৩২৬ কোটি টাকা
- পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ: বছরে প্রায় ৯০ কোটি টাকা
- সাশ্রয়: নৌপথে পরিবহন খরচ হ্রাস ও সিস্টেম লস কমে বছরে শত কোটি টাকা সাশ্রয়
পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিক
এই পাইপলাইন পরিবেশবান্ধব এবং ঝুঁকিমুক্ত। নৌপথে তেল পরিবহনে প্রায়ই ছড়িয়ে পড়ে তেলের কারণে জলদূষণ হতো, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি ছিল। পাইপলাইন ব্যবস্থায় এ ধরনের ঝুঁকি কার্যত শূন্যে নেমে আসবে। একই সঙ্গে সময়, খরচ এবং জ্বালানি অপচয় কমবে।
বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় নতুন অধ্যায়
এই প্রকল্পের ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শিল্পাঞ্চলগুলোতে তেলের সরবরাহ আরও দ্রুত, নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় এটি এক বিপ্লবী পরিবর্তন যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিপিসি ও পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই পাইপলাইন নেটওয়ার্ককে আরও বিস্তৃত করা হবে। দেশের উত্তরাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলেও সরাসরি পাইপলাইনে তেল সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকল্পের মূল সুবিধা
- দ্রুত সরবরাহ: মাত্র ১২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পৌঁছাবে
- ব্যয় সাশ্রয়: বছরে ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয়
- ঝুঁকিমুক্ত: নৌপথের ঝুঁকি এড়ানো যাবে
- পরিবেশবান্ধব: জলদূষণ ও তেল অপচয় রোধ
- অর্থনৈতিক লাভ: বার্ষিক আয় ৩২৬ কোটি টাকা
MAH – 12330 , Signalbd.com