বিশ্ব

হামাসকে ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়, গালি দিলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে উদ্দেশ করে দিয়েছেন চরম আক্রমণাত্মক বক্তব্য। গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় হামাসকে সরাসরি দায়ী করে তিনি বলেছেন, এই অক্ষমতাই ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যা চালানোর অজুহাত দিচ্ছে।

রামাল্লায় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর ৩২তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তৃতাকালে আব্বাস এই কঠোর ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, হামাস গাজায় যেসব জিম্মিকে আটকে রেখেছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, একজন মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মি, আদি আলেক্সান্ডারের প্রসঙ্গ, যাকে এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি।

আব্বাসের বিস্ফোরক মন্তব্য: “সান অব…”

মাহমুদ আব্বাস তাঁর বক্তব্যে বলেন,
“প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। কেন? কারণ তারা সেই মার্কিন জিম্মিকে হস্তান্তর করতে চায় না। সান অব…, তোমাদের কাছে যারা আছে, তাদের হস্তান্তর করো এবং আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দাও। ইসরায়েলকে অজুহাত দেওয়ার সুযোগ দিয়ো না।”

এই ভাষ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচনার ঝড় তোলে, বিশেষ করে “সান অব…” শব্দগুচ্ছ, যা অনেকেই ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক ভাষণে এ ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত বিরল এবং অভূতপূর্ব।

হামাস-আব্বাস উত্তেজনার পেছনের পটভূমি

হামাস ও আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) মধ্যে বহুদিন ধরে সম্পর্ক উত্তপ্ত। ২০০৫ সালে নির্বাচনের পর থেকে হামাস গাজা অঞ্চল শাসন করে আসছে, আর পিএ পশ্চিম তীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

আব্বাসের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের একাংশের অভিযোগ—তিনি পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ এবং বিভিন্ন সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে দমন করেছেন। অপরদিকে হামাস নিজেদের ‘প্রতিরোধের প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরলেও জিম্মি ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে আছে।

৭ অক্টোবরের হামলা ও বর্তমান পরিস্থিতি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী দক্ষিণ ইসরায়েলে এক অভূতপূর্ব হামলা চালায়। ওই ঘটনায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে ৫৮ জন এখনো হামাসের হাতে বন্দী এবং ৩৪ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।

আব্বাসের বক্তব্য অনুযায়ী, এই বন্দীদের মুক্তি না দিলে গাজার জনগণের ওপর চালানো ইসরায়েলি হামলাকে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন,
“ইসরায়েলের কারণে নয়, বরং এই বন্দীদের আটকে রাখার কারণেই আমাকে এবং আমার জনগণকে মূল্য দিতে হচ্ছে।”

ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযোগ ও আইসিসির পদক্ষেপ

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এই অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

উপসংহার: রাজনৈতিক বিভাজনের খেসারত দিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ বিভাজন এখন ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি করেছে। হামাস ও আব্বাস নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঐক্যের অভাবই ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা আরও বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আদায় করতে হলে হামাসকে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে এবং আব্বাসকে দরকার নতুন নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক কৌশল।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button