সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে ‘জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫’ গঠন করেছে সরকার। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে কমিশনের প্রধান করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে কী বলা হয়েছে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ধারা ১৫ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন জাতীয় বেতনস্কেল পুনর্বিন্যাসের কাজ করবে এবং ছয় মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে।
এই কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. মোসলেম উদ্দীন এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিম। এছাড়া আংশিক সময়ের জন্য আরও ১৫ জনকে খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত একজন সচিব বা অতিরিক্ত সচিব।
কমিশনের গঠন ও দায়িত্ব
কমিশনের মূল দায়িত্ব হবে নতুন বেতন কাঠামো ও ভাতার হার নির্ধারণ করা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ কমিশন কীভাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়, তা খুঁজে বের করবে।
সদস্য তালিকায় অর্থনীতি, শিক্ষা, সামরিক বাহিনী, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, হিসাববিজ্ঞানসহ বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনবোধে কমিশন আরও বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
পূর্ববর্তী পে-স্কেল এবং পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট
বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০১৫ সালের পে-স্কেলের অধীনে বেতনভাতা পাচ্ছেন। গত এক দশকে অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান থাকায় অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাস্তব আয় কমে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সরকারি কর্মচারীরা। অবশেষে সেই দাবির প্রেক্ষিতেই নতুন কমিশন গঠন করা হলো।
সরকারি কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া
কমিশন গঠনের ঘোষণাকে সরকারি কর্মচারীরা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে স্থবির বেতন কাঠামো জীবনযাত্রায় চাপ সৃষ্টি করেছিল। এখন নতুন কমিশন সুপারিশ করলে হয়তো তাদের আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
অনেকেই মনে করছেন, নতুন বেতন কাঠামোতে বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে।
কমিশনের সময়সীমা ও পরবর্তী করণীয়
এই কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। এর পরে মন্ত্রিসভায় আলোচনা শেষে নতুন পে-স্কেল কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। সরকারের লক্ষ্য, ২০২৫ সালের মধ্যেই নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নতুন বেতন কাঠামোতে শুধু বেতন বৃদ্ধি নয়, সরকারি সেবার দক্ষতা বাড়ানো এবং দুর্নীতি রোধের বিষয়েও সুপারিশ থাকা উচিত।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “যদি মুদ্রাস্ফীতি ও ক্রয়ক্ষমতার সামঞ্জস্য রেখে নতুন পে-স্কেল তৈরি হয়, তাহলে সরকারি কর্মচারীদের জীবনে স্বস্তি ফিরবে।”
সারসংক্ষেপ
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে নতুন বেতন কমিশন গঠন করেছে সরকার। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে কমিশনের সভাপতি করে ‘জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫’ গঠন করা হয়েছে। এ কমিশনকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে।
নতুন বেতন কমিশনের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। এখন সবার নজর কমিশনের সুপারিশের দিকে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের এই সময়ে কমিশন কীভাবে একটি বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামো প্রস্তাব করে, সেটিই হবে বড় প্রশ্ন।
এম আর এম – ০৫৫০, Signalbd.com