‘যুদ্ধবিরতি’ পোস্ট দিয়ে তোপের মুখে সালমান খান

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যখন শান্তির আলো ফুটতে শুরু করেছে, তখন বলিউড সুপারস্টার সালমান খান তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধবিরতির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি পোস্ট দেন। তবে শান্তির বার্তা দেওয়ার পরও তিনি পড়েছেন তীব্র সমালোচনার মুখে। যুদ্ধবিরতির মতো সংবেদনশীল মুহূর্তে এমন পোস্টের জন্য নেটিজেনদের একাংশ তাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেও অভিহিত করেছেন।
যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট: ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পটভূমি
গত ২২ এপ্রিল ভারতের দক্ষিণ কাশ্মীরের পেহেলগমে ঘটে একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। এতে প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন ভারতীয় নাগরিক। ভারত সরকার সরাসরি পাকিস্তানকে দোষারোপ করে এবং পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেয়। এর পাশাপাশি ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের সামরিক অভিযানে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় হামলা চালানো হয়।
এর জবাবে পাকিস্তানও ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। ক্রমেই যুদ্ধাবস্থা তীব্র হতে থাকে, এবং দুই দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কাও দেখা দেয়। এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে।
সালমান খানের পোস্ট: প্রশান্তির বার্তায়ও ঝড়!
১০ মে (শনিবার) রাতেই বলিউড তারকা সালমান খান তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে লেখেন:
“যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ!”
এই ছোট্ট বার্তায় তিনি একদিকে যুদ্ধের অবসানকে স্বাগত জানালেও, বিপরীতে শুরু হয় বিতর্কের ঝড়। অনেক নেটিজেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান, কারণ তার পোস্টে সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান কিংবা সন্ত্রাসীদের নিন্দা প্রকাশ ছিল না। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন—যখন অন্যান্য বলিউড তারকারা সৈনিকদের পাশে দাঁড়িয়ে দেশাত্মবোধক বার্তা দিচ্ছেন, তখন সালমান খান কেন ‘নিরপেক্ষ শান্তির বার্তা’ দিলেন?
নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া: “এটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা”
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লেখেন,
“সেনারা সীমান্তে প্রাণ দিচ্ছেন আর আপনি শুধু ‘ধন্যবাদ ঈশ্বর’? এটা কি দায়িত্বশীলতা?”
একজন ব্যবহারকারী লেখেন,
“যখন গোটা বলিউড সেনাদের সমর্থনে, তখন সালমান খান কি পাকিস্তানের পক্ষ নিচ্ছেন?”
সমালোচনার তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে সালমান খান পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলেন। তবে বিতর্ক তাতেও থামে না।
বলিউডের অন্যান্য তারকারা যা বলেছেন
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলিউডের অনেকেই ভারতের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার, কঙ্গনা রানাউত প্রমুখ তারকারা নিজেদের এক্স হ্যান্ডেলে সেনাবাহিনীর সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের প্রশংসা করেন। যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকেও তারা ‘ভারতের কূটনৈতিক বিজয়’ হিসেবে দেখেছেন।
কিন্তু সালমান খান যে ধরণের নিরপেক্ষ বার্তা দিলেন, তা অনেকের চোখে ‘কূটনৈতিক নয়, দায়িত্বহীন’।
বিতর্কের নেপথ্যে কি তাঁর ধর্মীয় পরিচয়?
অনেকে আবার এই বিতর্কের পেছনে সালমান খানের ধর্মীয় পরিচয়কে টেনে এনেছেন। মুসলিম তারকা হিসেবে তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলেননি—এই ব্যাখ্যা দিয়ে অনেকেই তার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যদিও অনেক বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এবং সেলিব্রিটিরা অনেক সময় সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন।
বিশ্লেষকদের মত: ‘শান্তি কামনা অন্যায় নয়, তবে প্রসঙ্গ বাছা জরুরি’
বিনোদন বিশ্লেষক ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞ অর্ণব চক্রবর্তী বলেন,
“যুদ্ধবিরতি মানেই শান্তির বার্তা। একজন সেলিব্রিটি যদি মানবিক অবস্থান থেকে যুদ্ধবিরতি স্বাগত জানান, সেটা স্বাভাবিক। তবে সেই বার্তায় প্রসঙ্গ নির্বাচনে সতর্ক থাকা জরুরি। সেনাবাহিনীর ত্যাগকে উপেক্ষা করা মানুষের আবেগে আঘাত করে।”
পূর্ববর্তী বিতর্কে সালমান: এই প্রথম নয়
উল্লেখ্য, এটি সালমান খানের জন্য প্রথম বিতর্ক নয়। অতীতে নানা সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইস্যুতে নীরবতা বা নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার কারণে তিনি নেটদুনিয়ায় সমালোচিত হয়েছেন। কখনো পাকিস্তানি শিল্পীদের সমর্থনে কথা বলে, আবার কখনো ভারতের সেনা অভিযান নিয়ে চুপ থেকে তিনি বিতর্ক তৈরি করেছেন।
তারকাদের সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে নতুন বিতর্ক
সালমান খানের সাম্প্রতিক ‘শান্তির বার্তা’ আমাদের সামনে আবারও একটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে—তারকাদের সামাজিক দায় কতটা? যুদ্ধ, সংকট বা জাতীয় বিপর্যয়ের সময় তারা কি শুধুই শিল্পী নাকি জনসাধারণের আবেগের প্রতি দায়িত্বশীল মুখপাত্র?
যুদ্ধবিরতির মতো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, তারকাদের একেকটি বাক্যই সমাজে বড় প্রভাব ফেলে। সালমান খানের পোস্টে হয়তো শান্তির আকাঙ্ক্ষা ছিল, তবে তাঁর সেই বার্তায় সময়, প্রেক্ষাপট ও ভাষার ব্যবহার যদি না হয় সংবেদনশীল, তাহলে সেটা ‘ভুল সময়ে ভুল বার্তা’ হিসেবেই বিবেচিত হয়।