আফগানিস্তানে ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২২ জনে পৌঁছেছে

পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য প্রদেশ কুনারে ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে আঘাত হানা ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২২ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ১,৫০০ জন। তালেবান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও আল–জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
ভূমিকম্পের সময় ও মাত্রা
স্থানীয় সময় অনুযায়ী, ৩১ আগস্ট রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬.০, এবং উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে। এ ধরনের গভীরতা ভূমিকম্পের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্ধার অভিযান
কুনার প্রদেশের নুরগাল, সোকি, ওয়াতপুর, মানোগি ও চাপদারা জেলায় অন্তত ২৫০ জন নিহত হয়েছেন এবং ৫০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। নাঙ্গারহার প্রদেশে ৯ জনের প্রাণহানি ও ৩০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান জানিয়েছেন, দুর্গম পার্বত্য এলাকায় উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন গ্রামে ভূমিধস ও ধ্বংসস্তূপের কারণে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারছেন না।
আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য তালেবান সরকার বিভিন্ন সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হেলিকপ্টার ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা সেনা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে মিলে উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছেন।
ভূমিকম্পের প্রভাব ও পূর্ববর্তী ঘটনা
আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ, বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালার আশপাশের অঞ্চলগুলো। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হেরাত প্রদেশে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে আনুমানিক ১,৫০০ থেকে ৪,০০০ জন নিহত হন, যা আফগানিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল। এছাড়া, ২০২৩ সালের ২১ মার্চ বাদাখশান প্রদেশে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ২১ জন নিহত ও ৪২৪ জন আহত হন।
ভূমিকম্পের কারণ ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ
আফগানিস্তান ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় একটি অঞ্চল, যেখানে ইউরেশীয় ও ভারতীয় টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে। এই প্লেটগুলোর সংঘর্ষের ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কুনার জেলার কুজ কুনার এলাকায়, যা নাঙ্গারহার প্রদেশের জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে অবস্থিত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহায়তা
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের পর দ্রুত সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জাতিসংঘ, রেড ক্রস ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছে। তবে, সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আকাশপথে সহায়তা পাঠানো হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি ও সতর্কতা
ভূমিকম্পের পর আফগানিস্তানে ভবিষ্যৎ ভূমিকম্পের প্রস্তুতি ও সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকাজে সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই দুর্যোগে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আফগানিস্তানের জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের এই দুঃসময়ে সাহায্য করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
MAH – 12584, Signalbd.com