সরকারি নিরীক্ষা বিল কি গোপনীয় দলিল, প্রশ্ন টিআইবির

সরকারি নিরীক্ষা বা পাবলিক অডিট বিল-২০২৪-এর খসড়া প্রণয়নের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার চর্চা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি এই বিলটি অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে টিআইবি জানিয়েছে, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায় যে, সরকারি নিরীক্ষা বিলের খসড়া শুধুমাত্র অর্থ মন্ত্রণালয়, নির্দিষ্ট কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান, একটি দাতা সংস্থা এবং বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে টিআইবি অস্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছে।
গোপনীয়তা নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘ প্রত্যাশিত অডিট বিলের খসড়া শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে এবং বিশ্বব্যাংকের মতামতের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হচ্ছে। এটি কি শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ও একটি প্রভাবশালী ঋণদাতা সংস্থার বিষয়? এই বিলটি জনগণের করের অর্থের স্বচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য তৈরি করা হচ্ছে, তাই নাগরিক সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা আবশ্যক।’
টিআইবি বলছে, পাবলিক অডিট বিলের খসড়া জনস্বার্থে উন্মুক্ত না রাখার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি নথি, যা রাষ্ট্রের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে প্রভাবিত করবে। ফলে এটি জনগণের মতামত ছাড়া চূড়ান্ত করা উচিত নয়।
সিএজি’র স্বাধীনতা নিয়ে টিআইবির সুপারিশ
২০১৫ সালে ‘মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি সিএজি’র সাংবিধানিক স্বাধীনতার জন্য ২০ দফা সুপারিশ করেছিল। এর মধ্যে ছিল:
- সিএজিকে বাজেট, নিয়োগসহ সব বিষয়ে স্বাধীন ক্ষমতা দেওয়া।
- নিরীক্ষা আইন সংশোধন করে অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা।
- সিএজিকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের বাইরে রাখা।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিএজিকে শক্তিশালী করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু বর্তমান খসড়া বিল পর্যালোচনার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সরকারি সংস্থা ও বিশ্বব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা জনস্বার্থের পরিপন্থী।’
সিএজি কি শুধুমাত্র সরকারের নিয়ন্ত্রিত সংস্থা?
টিআইবি মনে করে, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (CAG) কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় বা আমলাতান্ত্রিক সংস্থার অধীনস্থ নয়। এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যার চূড়ান্ত মালিকানা জনগণের হাতে থাকা উচিত। কিন্তু সরকার এই প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে সীমিত করতে চাইছে বলে টিআইবির সন্দেহ।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘সিএজির কার্যক্রমকে একটি স্বাধীন সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত করা প্রয়োজন। এটি কোনো সরকারের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান নয়, বরং জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে একটি শক্তিশালী নিরীক্ষা সংস্থা। খসড়া অডিট বিল পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় কেবলমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বব্যাংকের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বিল উন্মুক্ত করার আহ্বান
টিআইবি দাবি জানিয়েছে, সরকার যেন অবিলম্বে এই বিলের খসড়া জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এবং অংশীজনদের মতামতের সুযোগ দেয়।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই বিলটি যদি সত্যিকার অর্থে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায়, তবে অবশ্যই এটি উন্মুক্ত করতে হবে। এতে সাধারণ নাগরিক, গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়া উচিত।’
উপসংহার
সরকারি নিরীক্ষা বিল-২০২৪-এর খসড়া প্রণয়নে গোপনীয়তার যে চর্চা করা হচ্ছে, তা গণতান্ত্রিক নীতিমালার পরিপন্থী বলে মনে করছে টিআইবি। তারা মনে করে, বিলটি জনগণের অর্থ ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই এই বিলের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণ করা উচিত।