ভারতে শতাধিক যাত্রী নিয়ে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত

গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের পাশে শারদার ভাল্লাভ ভাই পেটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (SVPIA) পাশেই আজ বৃহস্পতিবার ভোরে এয়ার ইন্ডিয়া অপারেটেড একটি যাত্রীবাহী বিমানের বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। বিমানে মোট ২৪২ জন যাত্রী ও экиউপ (crew) ছিলেন বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। হতাহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত না হলে বিমানবন্দরে কালো ধোঁয়ার কল্লোল, ভগ্নাবশেষের মাঝে ঢলে পড়া বিপদসঙ্কেত ও উদ্ধার কর্মসূচি শুরু হয়েছে নিয়ে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দুর্ঘটনার সময়সূচি ও পরিস্থিতি
- ডিহাইভ হার: স্থানীয় সময় সকাল প্রায় ০৬:২০ মিনিটে বিমানটি আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন/বার্মিংহামের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে।
- বিধ্বস্ত স্থান: উড্ডয়নের কয়েক মাইল পর ‘মেঘানি’ এলাকার কাছে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রানওয়ে থেকে দূরে উড়ে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়।
- প্রাথমিক চিত্র: টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, ধোঁয়া আর আগুনের লেগুনে আকাশ কালো হয়ে ওঠে। ভগ্নাংশের মাঝে নিঃশব্দে বিস্ফোরণ ও মানুষের চিৎকার ঢেউ তুলে তোলে হাওয়ায়।
যাত্রী, ক্রু ও উদ্ধার
- যাত্রীর সংখ্যা: এয়্যার ইন্ডিয়ার সূত্রে জানা গেছে, বিমানে ২৩৪ জন যাত্রী ও ৮ জন ক্রু ছিলেন। তবে অন্য মিডিয়া ১৩৩ জন পর্যন্ত যাত্রী উল্লেখ করেছে।
- উদ্ধার তৎপরতা: অবিলম্বে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস, আম্বুলেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর অবস্থা সহ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। একাধিক ব্যক্তির শরীরে দগ্ধের চিহ্ন দেখা গেছে।
- হতাহতের খবর: আজ বিকেল অবধি সরকারি ভাবে হতাহত বা জীবিত বাঁচা যাত্রীদের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্তা শনাক্তে কাজ করছেন ।
বিমান কর্তৃপক্ষ ও তদন্ত
- DGC A তত্ত্বাবধান: ভারতের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বোর্ড এবং DGCA (Directorate General of Civil Aviation) যৌথ দল ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নেয়।
- প্রাথমিক তথ্য: বিমান চেষ্টা করছিল ‘স্টল রিকভারি’ বা নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে, কিন্তু অপারেটিং সমস্যা ও ‘স্টল ওয়্র্নিং’ সংকেত পেয়ে বিধ্বস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
- বিভিন্ন কারণ: আবহাওয়া ভালো ছিল, তাই যান্ত্রিক ত্রুটি বা পাইলটের ভুল আরও তদন্তের বিষয় হতে পারে ।
প্রেক্ষাপট: আহমেদাবাদে পূর্বের দুর্ঘটনা
১৯৮৮ সালের ১৯ অক্টোবর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১১৩ একই বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে ১৩৩ জনের মৃত্যু ঘটে; যা ভারতের ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা। পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা বিধি জোরদারি এবং বিমান পরিচালনায় কঠোর মানদণ্ড নির্ধারিত হয়।
বিমান যাত্রার উপর প্রভাব
- ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্ব: SVPIA থেকে আজ ও আগামী দুই দিনের মধ্যে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সাময়িক বন্ধের নির্দেশ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীণ রুটেও কিছু বিলম্ব ও রুট শিফটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- ভ্রমণ সুচনা: ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের জন্য বাড়তি বসার ব্যবস্থা এবং ফেরত যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। বিমান সংস্থা খরচ মেটাবে বলে জানিয়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও সহায়তা
- প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি: মোদি সরকারের তরফে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের ২ লাখ রুপি দিতে হবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- রাজ্য সরকারের ভূমিকা: গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিপরীতে ত্রাণ তহবিল চালু করেছেন এবং আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্বেগ: যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটি ফোরামে দ্রুত আলাপ-বার্তা চলছে, আহত ও নিহত সম্পর্কে তথ্য আদানপ্রদান করছে।
- অন্য বিমান সংস্থার প্রতিকার: বিমানে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য এয়ারলাইনস খরচবিহীন বিমানে বিমানবন্দরে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
এয়ার ভ্রমণ নিরাপত্তা: বিশেষজ্ঞদের মতামত
- অভিজ্ঞ পাইলট: “বিমান ওঠার পর স্টল বা ইঞ্জিন থ্রাস্ট লস্ হলে দ্রুত অবতরণ ব্যর্থ হতে পারে,” মন্তব্য করেন প্রাক্তন এয়ার ফোর্স পাইলট।
- বাণিজ্যিক বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ: নিয়মিত ইঞ্জিন ও এভিওনিক্স ইনস্পেকশন জরুরি, অন্যথায় এ ধরনের ঘটনা ঘিঞ্জি হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
- গভীর তদন্ত প্রতিবেদন: দুই মাসের মধ্যে কমিশন পূর্ণ প্রতিবেদন দেবে।
- নিরাপত্তা মানদণ্ড পুনর্বিবেচনা: বিমান চলাচলের আন্তর্জাতিক সংস্থা ICAO-এর পরামর্শ অনুযায়ী আনতে পারে নতুন নিয়ম।
- ট্রেনিং ও প্রটোকল: পাইলট ও কেবিন ক্রুদের জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় পুনঃপ্রশিক্ষণ।
আহমেদাবাদ দুর্ঘটনা শুধু একটি বিমান অপারেশনের ব্যর্থতা নয়, বরং সাধারণ যাত্রীদের মানুষের নিরাপত্তা ও আস্থার পরীক্ষাও বটে। দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা, সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে যেনো আবার এ রকম দুঃখের ছোঁয়া না আসে।