বানিজ্য

আলু সংরক্ষণে ৮ টাকা ভাড়া বেঁধে দিলেন হিমাগার মালিকরা

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন চলতি বছরে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে কেজি প্রতি আট টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে। আগের বছরের তুলনায় এই ভাড়া বেড়েছে এক টাকা। সংগঠনের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংগঠনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে।

এ সময় হিমাগার মালিকরা সরকারের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলেছেন। তাদের দাবি, হিমাগারের ভাড়া বাড়ানো, ব্যাংকের সুদের হার কমানো, বিদ্যুৎ বিল কমানোসহ কৃষকদের সুরক্ষায় নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘চলতি বছরে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে কেজি প্রতি আট টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের বছর ছিল সাত টাকা।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আগামী বছরগুলিতে এই ভাড়া কত বাড়বে বা কমবে, তা হিমাগার মালিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এখন পর্যন্ত হিমাগারের ভাড়া একটুকু বাড়ানো হলেও তা কৃষকদের জন্য বেশ চাপের সৃষ্টি করছে।’’

এ বছরের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ কেজি আলুর বস্তার জন্য ৩৫০ টাকা খরচ হবে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে, যেমন ৭০ থেকে ৭২ কেজি ওজনের বস্তার ক্ষেত্রে, ভাড়া একটু কমিয়ে সাড়ে ৩০০ টাকা নেয়া হয়েছে। ফলে, এই সিস্টেমের মাধ্যমে হিমাগার মালিকরা কিছু পরিমাণে আয়ের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, যা তাদের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।

ব্যাংকের সুদের হার কমানোর আহ্বান

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোরও দাবি জানানো হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদ ১৭ শতাংশের কাছাকাছি, যা অত্যধিক বলে মনে করছেন তারা। হিমাগার মালিকদের দাবি, এই সুদের হার কমিয়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে তারা কৃষকদের জন্য আরো সস্তায় আলু সংরক্ষণ এবং ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।

এছাড়া বিদ্যুৎ বিলের সমস্যাও এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে বিদ্যুতের দাম কমানোর জন্য। বর্তমানে পিক আওয়ারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল ১৩.৬২ টাকা এবং অফপিক আওয়ারে ৯.৬২ টাকা। এই মূল্য কমিয়ে ৫ টাকা করার দাবিও উঠেছে সংবাদ সম্মেলনে।

ভ্যাট ও টিডিএস প্রত্যাহারের দাবি

হিমাগার মালিকদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল ভ্যাট ও উৎসে কর কর্তন (টিডিএস) প্রত্যাহারের। হিমাগারের মালিকরা মনে করেন, এই কর কর্তন তাদের জন্য অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করছে এবং এতে করে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বাড়ছে। তারা সরকারের কাছে এই ট্যাক্স পলিসি পরিবর্তন করার দাবি জানাচ্ছেন।

আলুর বাজারে কোনো অস্বাভাবিক দাম বাড়বে না

সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আরো এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন, তা হল আলুর বাজার পরিস্থিতি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, চলতি বছরে আলুর উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাজারে দাম অতিরিক্ত বাড়বে না। ‘‘খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম গত বছরের মতো অতিরিক্ত হবে না’’ বলে তিনি আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য এটি একটি সুখবর, কারণ গত বছর আলুর দাম অসংখ্য কৃষকের জন্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিল। এবার সরকার ও কৃষকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

হিমাগার মালিকদের অন্যান্য দাবিগুলো

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইশতিয়াক আহমেদ, পরিচালক হাসেন আলী, কাজী মেহাম্মদ ইদ্রিস, চন্দন কুমার সাহা, মো. তারিকুল ইসলাম খান, গোলাম সরোয়ার রবিন, মাইনুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম বাবু, ফরহাদ হোসেন আকন্দ, কামরুল ইসলাম এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুসান্ত কুমার প্রামানিক। তারা আরও বলেন, হিমাগারের উন্নয়ন ও কৃষকদের উপকারের জন্য সরকারকে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

শেষ কথা

হিমাগার মালিকদের দেয়া এই নতুন ভাড়া বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য কিছুটা চাপ সৃষ্টি করবে, তবে এটি দেশের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকারের উচিত হিমাগার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবিগুলোর সমাধান বের করা, যাতে কৃষকদের সুরক্ষা এবং দেশের আলু সংরক্ষণ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button