এসএসসি পরীক্ষায় পটুয়াখালীর চার বিদ্যালয়ে পাস করেনি কেউই

বরিশাল বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। পটুয়াখালী জেলার চারটি বিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১২ জন শিক্ষার্থীর কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এই ব্যর্থতার পেছনে শিক্ষক সংকট, অব্যবস্থা এবং মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোথায় কী ঘটেছে?
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল অনুযায়ী, পটুয়াখালীর নিম্নলিখিত চারটি বিদ্যালয়ে পাশের হার শূন্য শতাংশ:
- মিয়াবাড়ি মডেল হাই স্কুল, সদর উপজেলা – ১ জন
- কিসমতপুর গার্লস স্কুল, মির্জাগঞ্জ – ২ জন
- পূর্ব আলীপুর হাই স্কুল, দশমিনা – ৮ জন
- জলিশা গার্লস স্কুল, দুমকি – ১ জন
এই ১২ জন শিক্ষার্থীর কেউই উত্তীর্ণ হতে না পারায় প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে হতাশা ও ব্যঙ্গ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দশমিনার পূর্ব আলীপুর হাই স্কুল মাত্র দুই বছর আগে মাধ্যমিক পর্যায়ের অনুমোদন পায়। প্রধান শিক্ষকের দাবি, প্রতিষ্ঠানে এখনও পর্যাপ্ত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। এতে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এমন সমস্যা অন্যান্য তিনটি বিদ্যালয়েও রয়েছে।
শিক্ষকদের অবস্থান ও প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া
ফল প্রকাশের পর থেকে আলোচনায় থাকা চারটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কেউই সংবাদ মাধ্যমের সাথে যোগাযোগ রাখছেন না। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। জেলা শিক্ষা অফিস বলছে, বোর্ডের নির্দেশনা পেলেই নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন —
“বোর্ড থেকে যেসব নির্দেশনা আসবে, সেগুলোর আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।”
ফলাফলের পরিসংখ্যান ও তুলনামূলক চিত্র
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পটুয়াখালী জেলার গড় পাশের হার ৫৫.৭২ শতাংশ। যদিও বরিশাল বোর্ডের সামগ্রিক গড় পাশের হার ৫৫.১৮ শতাংশ, অর্থাৎ পটুয়াখালীর সামগ্রিক চিত্র খুব খারাপ নয়। কিন্তু ঐ চারটি বিদ্যালয়ের শূন্য পাসের ঘটনা সার্বিক চিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: ব্যর্থতার মূল কারণ কী?
পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাফের আহমেদ বলেন —
“একটি বিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস না করাটা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি শিক্ষাব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার ইঙ্গিত বহন করে। এতে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষকদের দায়বদ্ধতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যর্থতার পেছনে যে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করা যায় তা হলো:
- শিক্ষকের সংকট ও অযোগ্যতা
- সঠিক পাঠদান ও মনিটরিংয়ের ঘাটতি
- বিদ্যালয় পরিচালনায় অনিয়ম
- ছাত্রদের অনুপ্রেরণাহীনতা ও অভিভাবকদের উদাসীনতা
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য করণীয়
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনই প্রতিটি বিদ্যালয়ের একাডেমিক অবস্থা, শিক্ষক সংখ্যার পর্যালোচনা এবং ফলাফলের পেছনের কারণগুলো চিহ্নিত করে পদক্ষেপ না নিলে পরবর্তী বছরগুলোতেও এমন দুর্ভাগ্যজনক ফলাফল পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
প্রশাসনের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সন্তানদের শিক্ষায় আরও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত ক্লাস মনিটরিং এবং পাঠ্যসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন।
সারসংক্ষেপ
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পটুয়াখালী জেলার চারটি বিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এই চারটি বিদ্যালয়ে অংশগ্রহণকারী ১২ জন শিক্ষার্থীর কেউই পাস করতে পারেনি। এ ঘটনায় জেলা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
পটুয়াখালীর এই চাঞ্চল্যকর ফলাফল আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। শুধুমাত্র সংখ্যার খেলা নয়, এ যেন একটি আদর্শহীনতার প্রতিফলন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং প্রশাসনের দায়িত্ব যেন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে — সেটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এম আর এম – ০২৭৮, Signalbd.com