বিশ্ব

ইসরায়েলের হামলায় নিহত হলেন ইরানের বিপ্লবী গার্ড প্রধান হোসেইন সালামি

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আজ ভয়াবহ এক মোড় নিয়েছে। আজ শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (IRGC)–এর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। এই তথ্য ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে।

কী ঘটেছে?

তেহরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টার কিছু পর একাধিক ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান রাজধানী তেহরান ও নাতানজ শহরে আক্রমণ চালায়। হামলায় মূল টার্গেট ছিল বিপ্লবী গার্ডের সদর দপ্তর, এবং পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র।

হামলায় ফারেদুন আব্বাসি, যিনি গত ২৫ বছর ধরে ইরানের পারমাণবিক শক্তিবিষয়ক সংস্থার প্রধান ছিলেন, তিনিও নিহত হন।

নিহত হোসেইন সালামি: একজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতার প্রস্থান

হোসেইন সালামি ২০১৯ সাল থেকে IRGC-এর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ ও সামরিক কর্মকাণ্ডে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

তার মৃত্যু ইরান সরকারের জন্য একটি বিশাল সামরিক ও কৌশলগত ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ইসরায়েলের অবস্থান

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেন:

“এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক বোমা কর্মসূচি ও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। যতদিন প্রয়োজন, ততদিন এই প্রতিরোধমূলক অভিযান চলবে।”

তিনি আরও বলেন, তেহরানের দক্ষিণে নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে সফলভাবে হামলা চালানো হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া: জরুরি বৈঠক, পাল্টা প্রতিশ্রুতি

ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ তড়িঘড়ি করে জরুরি বৈঠক করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই হামলাকে “সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা” হিসেবে দেখছে ইরান।

IRGC-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে:

“এই শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না। ইসরায়েলের প্রতিটি সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্য আমাদের পাল্টা হামলার আওতায় আসবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

  • জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
  • যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
  • রাশিয়া ও চীন কড়া ভাষায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং একে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।
  • ইইউ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলাকে “বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি” বলেছে।

বিশ্লেষণ: বড় যুদ্ধের শঙ্কা?

বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন শীর্ষ জেনারেল ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পর ইরান নিশ্চয়ই প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতি নেবে। এতে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বা বহুপাক্ষিক সংঘাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।

“এই মুহূর্তে এক ফোঁটা ভুল হিসাবই মধ্যপ্রাচ্যকে বিস্ফোরণে ঠেলে দিতে পারে।”

ড. আরমান হাশেমি, ইরানবিষয়ক বিশ্লেষক, আল-জাজিরা

অতীত হামলার ধারাবাহিকতা

২০২১ সালের এপ্রিলেও নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনাতে সাইবার হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছিল ইরান। সেটিও ছিল পারমাণবিক কর্মসূচি ব্যাহত করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।

তবে এবারের ঘটনা সরাসরি সামরিক আক্রমণ হওয়ায় পরিস্থিতির মাত্রা ভিন্ন এবং অনেক বেশি বিপজ্জনক।

স্থানীয় পরিস্থিতি

  • তেহরানজুড়ে ৬–৯টি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে
  • ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা
  • বিভিন্ন আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত
  • শহরে আতঙ্ক ও জরুরি অবস্থা জারি

শুরু কি এক নতুন যুদ্ধের?

হোসেইন সালামির মৃত্যু ইরানের অভ্যন্তরে ক্ষোভ, শোক ও প্রতিশোধের মিশ্র অনুভূতি তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ইরান পাল্টা হামলায় যায়, তবে মধ্যপ্রাচ্য একটি ভয়ানক যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button