ফুটবল

ভারতীয় ফুটবলের সামনে আবারও ফিফার নিষেধাজ্ঞার হুমকি

ভারতীয় ফুটবল জগতে আবারও নেমেছে অস্থিরতার কালো ছায়া। মাত্র তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ফিফার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে ভারত। ইতিমধ্যে ফিফা (FIFA) এবং এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (AFC) যৌথভাবে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)-কে কড়া সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। মূল সমস্যা ফেডারেশনের সংবিধান সংশোধন না করা

ফিফার পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ এসেছে—২০২৫ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন নিতে হবে। যদি সময়সীমা অতিক্রম করে এই কাজ সম্পন্ন না হয়, তবে ভারতকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।

কেন ফিফার এই হুমকি? মূল কারণ জানুন

ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশের ফুটবল ফেডারেশনে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ থাকা চলবে না। কিন্তু ভারতের ফুটবল প্রশাসনে আদালত-নিযুক্ত প্রশাসক বা অন্য কোনো বাইরের সংস্থার হস্তক্ষেপকে ফিফা তাদের নীতি বিরোধী বলে মনে করে
এআইএফএফের সংবিধান ২০১১ সালে তৈরি হয়েছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নতুন নির্দেশনা, নীতি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড যুক্ত হয়েছে, যা এখনও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফিফা দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে সংবিধান সংশোধনের নির্দেশ দিয়ে আসছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে গাফিলতি হয়েছে।

২০২২ সালে কি হয়েছিল? আগের নিষেধাজ্ঞার গল্প

২০২২ সালের ১৬ আগস্ট, ফিফা ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে নিষিদ্ধ করেছিল। কারণ তখন সুপ্রিম কোর্ট একটি প্রশাসনিক কমিটি (CoA) গঠন করেছিল, যারা এআইএফএফের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। ফিফার মতে, এটি ছিল তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ, যা তাদের সংবিধানের পরিপন্থী।
ফলাফল?

  • ভারত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেনি
  • নারীদের U-17 বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল
  • দেশের ফুটবলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল

তবে মাত্র ১৫ দিনের মাথায়, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ শেষ হওয়ার পর ফিফা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

এবার পরিস্থিতি কতটা গুরুতর?

২০২৫ সালের এই পরিস্থিতি ২০২২ সালের চেয়ে অধিক গুরুতর। এবার সরাসরি সংবিধান সংশোধন ও আদালতের অনুমোদনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ফিফা।

  • ডেডলাইন: ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • শর্ত: এআইএফএফকে সংবিধান সংশোধন করে আদালতের অনুমতি নিতে হবে
  • ব্যর্থ হলে: ভারত আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিষিদ্ধ হবে

এটি শুধু সিনিয়র দলের জন্য নয়, যুব ও নারী দলের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে

ভারতের ফুটবলে প্রভাব কী হতে পারে?

ফিফার নিষেধাজ্ঞা হলে ভারতের ফুটবলে নিম্নলিখিত প্রভাব পড়বে:
✔ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা বন্ধ হবে
✔ এএফসি কাপ, এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ বন্ধ হবে
✔ বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে অংশগ্রহণে বাধা আসবে
✔ ফিফার উন্নয়ন তহবিল বন্ধ হয়ে যাবে
✔ ভারতীয় ফুটবলের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে

বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন?

ভারতীয় ফুটবলের বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেডারেশন যদি এবারও গাফিলতি করে, তবে তা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে। দেশীয় লিগগুলো যেমন আইএসএল (ISL) এবং আই-লিগ, তাদের ওপরও প্রভাব পড়বে। অনেক বিনিয়োগকারী পিছিয়ে যেতে পারে।

ফিফার শর্ত মানা কতটা জরুরি?

ফিফার নিয়ম ভঙ্গ করলে কোনো দেশ ফুটবলে অংশ নিতে পারে না। ইতিমধ্যে অনেক দেশকে (কুয়েত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান) নিষিদ্ধ করা হয়েছে একই কারণে। ভারত যদি সময়মতো সংবিধান সংশোধন না করে, তবে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে ভারতকে বাদ দেওয়া হতে পারে।

ভারত কি শিখবে অতীতের ভুল থেকে?

২০২২ সালের অভিজ্ঞতা ভারতের জন্য ছিল বড় শিক্ষা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এখনো প্রশাসনিক জটিলতা ও ক্ষমতার লড়াই শেষ হয়নি। ৩০ অক্টোবরের সময়সীমা ভারতের ফুটবলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে

MAH – 12511 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button