বিশ্ব

ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা নিয়ে কুয়েতের সুখবর

 কুয়েত সরকার ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি ও নীতিমালায় বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশিসহ বিশ্বের লাখো প্রবাসীর জন্য এই পদক্ষেপ স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে।

ভিজিট ভিসা নিয়ে বড় পরিবর্তনের ঘোষণা কুয়েত সরকারের

কুয়েত সরকার সম্প্রতি ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে এই ভিসার প্রাথমিক মেয়াদ তিন মাস হলেও তা ছয় মাস কিংবা সর্বোচ্চ এক বছরের জন্যও বাড়ানো যাবে। এর আগে, এ ভিসার মেয়াদ ছিল তুলনামূলকভাবে সীমিত, যা প্রবাসীদের জন্য নানা রকম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াত।

কুয়েতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ ফাহাদ ইউসুফ সৌদ আল-সাবাহ জানান, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশটিকে আন্তর্জাতিক পর্যটন ও বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রে রূপান্তর করা। এর অংশ হিসেবেই ভিসা নীতিতে এমন যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে।

পূর্বের নিয়মের তুলনায় কী কী বদলেছে?

পূর্বে কুয়েতে ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী স্পনসর এবং শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ আত্মীয়র জন্যই ভিসা পাওয়ার সুযোগ ছিল। নতুন নীতিতে সেই বাধা অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। এখন চতুর্থ ডিগ্রির আত্মীয়রাও এই ভিসার আওতায় আসতে পারবেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরিবর্তন এসেছে তা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি সংক্রান্ত পূর্বশর্ত বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, আগে যাত্রীর জন্য শুধু কুয়েতি এয়ারলাইন্স ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও, এখন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স যেমন মিডল ইস্ট এয়ারলাইন্স, কুয়েতগামী যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

প্রবাসীদের জন্য কী ধরনের সুযোগ তৈরি হলো?

এই সিদ্ধান্ত প্রবাসীদের জন্য অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় ধরে কুয়েতে অবস্থান করছেন এবং পরিবার নিয়ে মিলিত হতে চাইছেন, তাদের জন্য এটি এক বিশাল সুখবর।

একজন প্রবাসী বাংলাদেশি জানান, “আগে পরিবারের কাউকে নিয়ে আসতে হলে সীমিত সময়ের মধ্যে সবকিছু সামলাতে হতো। এখন এক বছরের ভিসা পাওয়া গেলে পরিবার নিয়ে একটু স্বস্তিতে থাকা সম্ভব হবে।”

বাংলাদেশি শ্রমিকদের ক্ষেত্রে, নতুন ভিসা নীতির পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ‘ভিসা সত্যায়ন ব্যবস্থা’ চালু করা হয়েছে। এতে করে ভিসা জালিয়াতি ও প্রতারণার হার কমবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কুয়েত সরকারের বক্তব্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ ফাহাদ বলেন, “আমরা কুয়েতকে একটি আধুনিক, উন্মুক্ত ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা জনসাধারণের মতামতকে সম্মান করি এবং সেই অনুযায়ীই নীতিমালা হালনাগাদ করছি।”

তিনি আরও জানান, কুয়েতে একটি বিশাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণাধীন রয়েছে, যা দেশটির পর্যটন ও বাণিজ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। ভিসা ফি সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

সংখ্যা ও তুলনামূলক তথ্য

আগে ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার মেয়াদ ছিল সাধারণত ১ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৩ মাস। এখন তা ৩ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এটি কুয়েতের ইতিহাসে ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ।

আগে কেবল প্রথম ডিগ্রির আত্মীয়র জন্য এই ভিসা মিলতো, এখন তা চতুর্থ ডিগ্রি পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়েছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাতায়াতের অনুমতি প্রবাসীদের যাতায়াত ব্যয় ও সময় ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে।

বিশ্লেষণ: এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুয়েত সরকার যে পথ ধরেছে তা কেবল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং অর্থনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিবার পুনর্মিলনের সুযোগ বাড়লে প্রবাসীরা দেশটিতে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারবেন, যা সরাসরি শ্রম উৎপাদনশীলতায় প্রভাব ফেলবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “এটি কেবল ভিসা শিথিলকরণ নয়, বরং কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে একটি আশ্বাস যে, তারা অভিবাসীদের অধিকার ও প্রয়োজন বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।”

“এই সিদ্ধান্ত কুয়েতে বসবাসরত লাখো প্রবাসী পরিবারকে এক ছাদের নিচে থাকার সুযোগ করে দেবে”—একজন অভিবাসন বিশ্লেষক

শেষ কথা 

কুয়েত সরকারের ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা সংক্রান্ত এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত শুধু অভিবাসী পরিবারগুলোর জন্য নয়, বরং কুয়েতের অর্থনীতি ও বৈশ্বিক ভাবমূর্তির জন্যও ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে যদি এসব নীতিমালা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দ্রুততা বজায় রাখা যায়, তাহলে কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পারবে।

এম আর এম – ০৭১০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button