বাংলাদেশ

এসি থেকে নয়, দুর্নীতির নথি পুড়িয়ে দিতে বিয়াম ভবনে আগুন: পিবিআই

রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত বিয়াম ফাউন্ডেশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ধ্বংস করতেই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

বিয়াম ফাউন্ডেশনের অগ্নিকাণ্ড কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, বরং পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, অফিসের গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলার জন্যই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই দুজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পিবিআই-এর তদন্তে যা বেরিয়ে এসেছে

পিবিআই জানিয়েছে, তদন্তে প্রমাণ মিলেছে যে এই অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন বিয়াম ফাউন্ডেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। তার নির্দেশে অফিস সহায়ক আব্দুল মালেক এবং গাড়িচালক ফারুক ঘটনাস্থলে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেন। আগুন লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মালেক নিহত হন এবং ফারুক গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারুকও মারা যান।

সিসিটিভি ফুটেজ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ ঘটনার নেপথ্যের তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে বলে পিবিআই জানিয়েছে।

বিস্ফোরণের কারণ এবং ভুল ধারণার অবসান

প্রাথমিকভাবে অনেকেই মনে করেছিলেন, এ আগুন এসি বিস্ফোরণের কারণে লেগেছে। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, আগুন লাগার আগে কক্ষে পেট্রোল ঢালায় দাহ্য গ্যাস জমে গিয়েছিল। যখন আগুন লাগানো হয়, তখন ওই গ্যাস বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, যদি এটি এসি বিস্ফোরণের কারণে হতো, তাহলে এসির ইনডোর ইউনিট নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু ইউনিট অক্ষত থাকায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এসি বিস্ফোরণ এর জন্য দায়ী নয়।

দুর্নীতির নথি গোপন করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য

পিবিআই-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অগ্নিকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল অফিসের দুর্নীতির নথি পুড়িয়ে ফেলা এবং গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক তথ্য গোপন করা। অনেকদিন ধরেই এই পরিকল্পনা চলছিল। একটি আর্থিক অনিয়মের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই জাহিদুল ইসলাম এ পরিকল্পনা করেন।

প্রধান পরিকল্পনাকারী ও তার সহযোগী গ্রেফতার

তদন্তে উঠে এসেছে, পুরো পরিকল্পনার মূল হোতা ছিলেন জাহিদুল ইসলাম। তিনি তার পূর্বপরিচিত আশরাফুল ইসলামকে ব্যবহার করে এ ঘটনার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন। ইতোমধ্যে জাহিদুল ইসলাম ও আশরাফুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। আশরাফুল ঢাকায় বসবাস করতেন, আর এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছিলেন জাহিদ।

আর কে বা কারা জড়িত থাকতে পারে

পিবিআই জানিয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে কি না এবং এই ঘটনার ফলে কারা লাভবান হয়েছে — এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা বলছেন, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বের হলেই ঘটনার নেপথ্যের আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।

ঘটনার প্রভাব ও আলোড়ন

বিয়াম ফাউন্ডেশনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সারা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি ভবনে এমন ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায় দুর্নীতি গোপন করার জন্য কতটা বড় ধরনের ঝুঁকি নিতে পারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ভবিষ্যতে কী হবে

এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত বক্তব্য আসবে না। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, নথি পুড়িয়ে ফেলার মূল উদ্দেশ্যেই আগুন লাগানো হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, এই অগ্নিকাণ্ড থেকে আর কারা লাভবান হয়েছে, সেটিই হবে তদন্তের পরবর্তী ধাপ।

শেষ কথা 

বিয়াম ফাউন্ডেশনের অগ্নিকাণ্ড শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। তদন্ত এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসছে নেপথ্যের চমকপ্রদ তথ্য। এখন সবার চোখ এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনের দিকে।

এম আর এম – ০৫৭৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button