বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ টর্নেডোতে ২১ জনের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভয়াবহ টর্নেডোর আঘাতে অন্তত ২১ জন নিহত এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কেনটাকি ও মিসৌরি। মার্কিন আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছে, ঝড়ের কারণে আরও প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

শুক্রবার মধ্যরাত থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে ভয়াবহ এই টর্নেডোগুলো আঘাত হানতে শুরু করে। সেই সময় অধিকাংশ মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হয়। কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেসার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তার অঙ্গরাজ্যে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “এই দুর্যোগ আমাদের জন্য এক গভীর বেদনাময় মুহূর্ত। মৃতদের পরিবারদের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা।”

অপরদিকে মিসৌরি রাজ্যে আরও সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেন্ট লুইস শহরে। সেখানে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শহরের মেয়র কারা স্পেনসার। তিনি বলেন, “আমাদের শহর আজ শোকাহত। জানমালের যে ক্ষতি হয়েছে, তা বর্ণনাতীত। এক রাতে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তা আমাদের শহরের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।”

মেয়র স্পেনসার আরও জানান, টর্নেডোর আঘাতে অন্তত পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। বহু মানুষ ঘরের নিচে আটকে পড়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে মিসৌরির দক্ষিণাঞ্চলের স্কট কাউন্টিতেও টর্নেডো আঘাত হেনেছে। সেখানে আরও দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্গত এলাকাগুলোতে জরুরি চিকিৎসাসেবা, খাদ্য এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কেনটাকির লরেল কাউন্টিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মধ্যরাতের পর এই এলাকায় হঠাৎ টর্নেডো আঘাত হানলে বহু ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। স্থানীয় শেরিফ জন রুট এক বিবৃতিতে জানান, “আমাদের দল এখনো দুর্গতদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে। আমরা আশা করছি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও মানুষকে জীবিত উদ্ধার করতে পারব।”

এছাড়া আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, শুধু মিসৌরি ও কেনটাকিই নয়, টর্নেডোর প্রভাব পড়েছে উত্তরাঞ্চলের উইসকনসিন রাজ্যেও। সেখানে গ্রেট লেক অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। শক্তিশালী বাতাসে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের দুর্যোগ যুক্তরাষ্ট্রে বর্ষাকাল ও বসন্তকালে প্রায়ই ঘটে থাকে, কিন্তু এবারের টর্নেডোগুলোর তীব্রতা এবং ব্যাপকতা ছিল অস্বাভাবিক। জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা এ ধরনের দুর্যোগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

টেক্সাস রাজ্যে বর্তমানে বিরূপ আবহাওয়া পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ভয়াবহ দাবদাহের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দফতর জানায়, টেক্সাসের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। তারা স্থানীয় জনগণকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম জোরদার:
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (FEMA) জানিয়েছে, দুর্গত এলাকাগুলোতে দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। একই সঙ্গে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও রেড ক্রসের কর্মীরাও সহায়তায় অংশ নিচ্ছেন।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে:
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপর্যয়ের পর স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও বিদ্যুৎব্যবস্থা পুনঃস্থাপন এবং জনগণের মানসিক পুনর্বাসন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।

আবহাওয়া সতর্কবার্তা অব্যাহত:
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন টর্নেডো ও ঝড়ের ঝুঁকি রয়েছে মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে। বিশেষ করে ওহাইও, ইন্ডিয়ানা ও টেনেসিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জনগণকে সতর্ক থাকার জন্য নিয়মিত আবহাওয়ার খবর অনুসরণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

উপসংহার:
যুক্তরাষ্ট্রে এই টর্নেডো দুর্যোগ আবারও স্মরণ করিয়ে দিলো প্রকৃতির সামনে মানুষের অসহায়ত্ব। এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সময়োপযোগী পূর্বাভাস, জরুরি প্রস্তুতি এবং সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দুর্যোগ-সহনশীল অবকাঠামো গড়ে তোলা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button