ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকি ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির মঞ্চে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রযুক্তিখাতে শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধের কারণে। কর ও ব্যয়সংক্রান্ত বাজেট বিলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের একধরনের চাপা অসন্তোষ সম্প্রতি রূপ নিয়েছে সরাসরি বাকযুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে বসে মাস্কের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সমালোচনার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়ে দেন, ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সব ধরনের চুক্তি বাতিলের চিন্তা করছে তাঁর প্রশাসন।
হুমকি ট্রাম্পের: মাস্কের সরকারি সুবিধা ও চুক্তি বাতিলের ঘোষণা
ট্রাম্প তাঁর ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেন,
“আমাদের বাজেটে ব্যয় কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ইলন মাস্কের সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তিগুলো বাতিল করা। এতে শত শত কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব।”
তিনি আরও জানান, বাজেট সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে মাস্কের কোম্পানিগুলোর ওপর দেওয়া সরকারি সহায়তা ও কর-ছাড় পুনর্বিবেচনা করা হবে। উল্লেখ্য, স্পেসএক্স, টেসলা ও নিউরালিংকের মতো প্রতিষ্ঠান সরকারি চুক্তি ও ভর্তুকির মাধ্যমে বিভিন্ন মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রকল্পে অংশ নিয়েছে।
পাল্টা জবাব মাস্কের: ‘ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত’
প্রেসিডেন্টের এই হুমকির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পাল্টা জবাব দেন ইলন মাস্ক। সেখানে তিনি লেখেন,
“ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।”
তবে একইসঙ্গে মাস্ক এ-ও স্বীকার করেন যে, কংগ্রেসের উভয় কক্ষে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার কারণে এই অভিশংসন প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব।
একসময়কার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এখন প্রকাশ্য রণক্ষেত্র
এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ট্রাম্প ও মাস্ক। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাস্ক ট্রাম্পের প্রচারণাকে পরোক্ষভাবে সমর্থনও করেছিলেন। এমনকি মাস্ক দাবি করেন, তাঁর সহায়তা ছাড়া ট্রাম্প বিজয়ী হতে পারতেন না।
“আমার সহায়তা ছাড়া ২০২৪-এর নির্বাচনে আপনি (ট্রাম্প) জিততে পারতেন না,” – বলেন মাস্ক।
ট্রাম্পকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলেও উল্লেখ করেন মাস্ক। এই টুইটের পর ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
“ইলনের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এখন সেটা থাকবে কি না, জানি না।”
কী নিয়ে শুরু এই বিরোধ?
মূল বিরোধের সূত্রপাত ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাজেট বিল নিয়ে। এই বিলের মাধ্যমে বড় কর ছাড় এবং সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানো হলেও সামাজিক নিরাপত্তা ও পরিবেশ খাতে কাটছাঁটের প্রস্তাব করা হয়েছে। মাস্ক এই বিলকে ‘জঘন্য’ বলে কটাক্ষ করেন।
ট্রাম্প পরে এক বিবৃতিতে মাস্ককে ‘ভীষণ হতাশাজনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন মাস্ক, যার ফলে দ্রুতই এই মতবিরোধ ছড়িয়ে পড়ে জাতীয় আলোচনায়।
টেসলার শেয়ারদরে প্রভাব
এই টানাপোড়েনের পরপরই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ট্রাম্পের মন্তব্যের পরদিন টেসলার শেয়ারদর উল্লেখযোগ্য হারে পতন ঘটে, যা প্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে একধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি সত্যিই মাস্কের কোম্পানিগুলোর সরকারি চুক্তি বাতিল করা হয়, তবে শুধু টেসলাই নয়, মহাকাশ গবেষণা, এআই ও ইভি ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
রাজনীতিতে প্রযুক্তির প্রভাব: নতুন মাত্রা?
এই বিরোধের মধ্য দিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠে এসেছে প্রযুক্তিখাতের ধনকুবেররা কীভাবে রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেন এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কীভাবে জাতীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
মাস্ক ও ট্রাম্পের এই দ্বন্দ্ব শুধু দুই ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মার্কিন রাজনীতিতে ব্যবসা, করনীতি এবং প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ও শীর্ষ ধনকুবেরের এমন প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব বিরল নয়, তবে ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনা আগাম দিনের রাজনৈতিক ও প্রযুক্তি নীতিমালার ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সামনে ট্রাম্প প্রশাসন সত্যিই মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি সুবিধা বাতিল করে কিনা এবং কংগ্রেসে অভিশংসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় কিনা, সেটিই এখন দেখার বিষয়।