বিশ্ব

নতুন হজ বিধিমালা: মক্কায় প্রবেশে বাধ্যতামূলক অনুমতি, না মানলে কঠোর শাস্তির বিধান

চলতি হজ মৌসুমে পবিত্র নগরী মক্কায় প্রবেশের নিয়মাবলীতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে সৌদি আরব সরকার। জননিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে নতুন হজ নির্দেশনা। আগামী ২৩ এপ্রিল ২০২৫ (২৫ শাওয়াল ১৪৪৬ হিজরি) থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে।

অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

সৌদি আরবের পাবলিক সিকিউরিটি ডিরেক্টরেট (Public Security Directorate) জানিয়েছে, মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিক, প্রবাসী বা বিদেশি কেউই অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে না। মক্কার চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে বহু নিরাপত্তা চৌকি, যেখানে সন্দেহজনক ব্যক্তি বা অনুমতিপত্রবিহীন যাত্রীদের ফেরত পাঠানো হবে।

এই উদ্যোগ হজ মৌসুমে লাখ লাখ হজযাত্রীর নিরাপদ যাত্রা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং ধর্মীয় পরিবেশ রক্ষার জন্যই গৃহীত হয়েছে।

কোন কোন ডকুমেন্টে মক্কায় প্রবেশ সম্ভব?

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মক্কা শহরে প্রবেশ করা যাবে না। এই ডকুমেন্টগুলো হলো:

  1. সরকার অনুমোদিত হজ পারমিট (Hajj Permit)।
  2. মক্কায় নিবন্ধিত বাসিন্দার পরিচয়পত্র বা ইকামা
  3. পবিত্র স্থানগুলোতে কাজ করার অনুমতিপত্র (যারা হজ মৌসুমে কর্মরত থাকবেন)।

এই তিনটির যেকোনো একটি ব্যতীত কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে চাইলে আইন লঙ্ঘনের দায়ে জড়িত হবেন এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনুমতিপত্র কোথা থেকে পাবেন?

মক্কায় প্রবেশের জন্য অনুমতিপত্র অনলাইনে ইস্যু করা হবে। যারা কাজ বা হজ পালনের জন্য যাচ্ছেন, তাদের আবেদন করতে হবে নিচের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে:

  • আবশের ইনডিভিজুয়্যালস (Absher Individuals)
  • মুকিম (Muqeem)
  • তাসরিহ (Tasreeh) প্ল্যাটফর্ম – এটি একটি কেন্দ্রীয় ইউনিফায়েড পারমিট সিস্টেম।

এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে আবেদন করে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করা যাবে। আবেদনকারী ‘তাওয়াক্কালনা’ (Tawakkalna) অ্যাপের মাধ্যমে অনুমতির স্ট্যাটাসও দেখতে পারবেন।

হজ পারমিট সংগ্রহ বাধ্যতামূলক

হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে বলেছে, কেউ যদি হজ পালন করতে চান, তবে তাঁকে অবশ্যই ‘নুসুক’ (Nusuk) নামের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরকারিভাবে হজ পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। এটি তাসরিহ সিস্টেমের সঙ্গে সমন্বিত একটি ডিজিটাল পদ্ধতি।

ওমরাহ, ভিজিট বা ট্যুরিস্ট ভিসাধারীরা হজ পালনের অনুমতি পাবেন না। এটি সৌদি আইন অনুযায়ী কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুয়া হজ ক্যাম্পেইন সম্পর্কে সতর্কতা

সৌদি সরকার জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে অনেক ভুয়া হজ ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে, যেখানে লাইসেন্সবিহীন পরিবহন, আবাসন বা হজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এ ধরনের ক্যাম্পেইনে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি এবং এগুলোর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।

সরকার নাগরিক ও প্রবাসীদের অনুরোধ করেছে, কেউ এমন প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড দেখলে যেন দ্রুত জরুরি হটলাইন বা স্থানীয় নিরাপত্তা সংস্থায় রিপোর্ট করেন।

ওমরাহ ভিসার মেয়াদ শেষের নির্দিষ্ট তারিখ

সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ২০২৫ সালের হজ মৌসুমের আগে সৌদিতে অবস্থানকারী ওমরাহ ভিসাধারীদের জন্য ২৯ এপ্রিল (১ জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি) হলো দেশত্যাগের শেষ তারিখ

এই তারিখ অতিক্রম করে কেউ সৌদি আরবে অবস্থান করলে:

  • তা আইন লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।
  • ঐ ব্যক্তি কারাদণ্ড, মোটা অঙ্কের জরিমানা এবং প্রত্যাবাসনের মুখে পড়তে পারেন

অবৈধভাবে মক্কায় প্রবেশ বা অবস্থান: কঠোর শাস্তি

নতুন বিধিনিষেধ অনুযায়ী:

  • অনুমতিপত্র ছাড়া মক্কায় প্রবেশ আইনগত অপরাধ
  • এমন ব্যক্তি ধরা পড়লে তাকে তৎক্ষণাৎ ফেরত পাঠানো, জরিমানা, এমনকি কারাদণ্ডও দেওয়া হতে পারে।
  • ওমরাহ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেউ সৌদিতে অবস্থান করলে তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে এবং ভবিষ্যতে সৌদি আরব প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও জারি হতে পারে।

‘তাসরিহ’ প্ল্যাটফর্ম কী?

সৌদি সরকার সম্প্রতি সৌদি ডেটা অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথোরিটি (SDAIA)-এর সঙ্গে সমন্বয় করে ‘তাসরিহ’ নামের একটি কেন্দ্রীভূত পারমিট ব্যবস্থা চালু করেছে। এটি হজযাত্রী, স্বেচ্ছাসেবক, কর্মী এবং পরিবহনসেবাদানকারীদের জন্য অনুমতি ইস্যু করে।

এই পারমিট অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটালি যাচাইযোগ্য, ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটি বড় ভূমিকা রাখবে।

কেন এই নতুন বিধিনিষেধ?

সৌদি সরকার প্রতি বছর হজ মৌসুমে প্রায় ২০ লাখের বেশি হজযাত্রীকে মক্কায় স্বাগত জানায়। এর মধ্যে লক্ষাধিক ব্যক্তি প্রবাসী বা বিদেশি। এই বিশাল জনসমাগম পরিচালনায় শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় আবহ বজায় রাখা চ্যালেঞ্জিং।
এ বছর নতুন এই ডিজিটাল ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা:

  • অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
  • অবৈধ প্রবেশ ও অবস্থান রোধ করবে।
  • আইন-শৃঙ্খলা বজায় রেখে ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষা করবে।

২০২৫ সালের হজ মৌসুমে সৌদি আরব যে কঠোর নতুন নিয়ম চালু করেছে, তা শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের সুযোগ নয়, ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি সুসংগঠিত হজ অভিজ্ঞতা প্রদানের প্রয়াস
তাই যারা হজ বা ওমরাহ পালনের পরিকল্পনা করছেন, তাদের অবশ্যই সরকার নির্ধারিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে। নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button