দখলের লোভে গাজায় রাতভর ইসরায়েলের ভয়াবহ বোমা হামলা

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দখলের লোভে নতুন এক ভয়াবহ সামরিক অভিযান শুরু করেছে। গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় গাজার পূর্বাঞ্চল ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণের মুখে পড়েছে। তীব্র বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের আওয়াজে অস্থির হয়ে উঠেছে পুরো অঞ্চল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নতুন অভিযান দ্রুত শেষ করতে চান বলে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের বোমা হামলার বিস্তারিত
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার পূর্বাঞ্চলীয় সাবরা, জয়তুন ও শেজাইয়া এলাকায় রাতভর বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, এই হামলা গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও তীব্র। বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে অনেক বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বহু পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। গাজার প্রধান হাসপাতাল আল শিফায়ও হামলা চালানো হয়, যেখানে আল জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এই হামলা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের অবস্থান ও রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। তারা দাবী করেছে, এই অভিযান গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। তবে গাজার সাধারণ জনগণের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, প্রায় ১০ লাখ মানুষ গাজার সিটিতে আশ্রয় নিয়েছে বলে ফিলিস্তিনি সূত্রে জানা গেছে।
গাজার পূর্বঘটনা ও ইতিহাস
গাজার ওপর ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নতুন কিছু নয়। গত দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনের এই উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা এবং প্রতিরোধ চলছে ধারাবাহিকভাবে। পূর্বের অনেক যুদ্ধ ও সংঘর্ষের মধ্যে এই নতুন হামলা সবচেয়ে জোরদার এবং দীর্ঘস্থায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শান্তিচুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ইসরায়েল গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে গাজার পশ্চিম উপত্যকায় হামাসের ঘনীভূত উপস্থিতি, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
নতুন হামলার খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, গাজায় এই নতুন সামরিক অভিযান ‘অন্তহীন যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়া’ বোঝাচ্ছে। তিনি এই সংঘাতের অবসানের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন জার্মানি, ব্রিটেন গাজায় সামরিক সরঞ্জামের রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং ইসরায়েলকে হামলা বন্ধের জন্য চাপ দিচ্ছে।
জাতিসংঘও তীব্র উদ্বেগ জানিয়েছে এবং দুই পক্ষকে শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় সংঘাত শীঘ্রই কমার কোনো সম্ভাবনা এখনও দেখাচ্ছে না।
গাজার মানুষ ও পরিস্থিতির চিত্র
গাজার বাসিন্দারা রাতভর বোমাবর্ষণে আতঙ্কে কাটাচ্ছেন। বহু পরিবার নিজেদের জীবন বাঁচাতে গাজা সিটির পশ্চিম দিকে স্থানান্তরিত হয়েছে। আল সালাহ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এত বড়ো হামলা কখনো দেখি নি। ট্যাংক ও বিমান থেকে অবিরাম গোলাবর্ষণ হচ্ছে, আমাদের নিরাপদ আশ্রয় নেই।” শিশুসহ নারী-পুরুষ সবাই ঝুঁকি নিয়ে সরে যাচ্ছেন, কিন্তু সেখানেও নিরাপত্তা নেই বলেই জানা গেছে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, আল শিফা হাসপাতালেও ক্ষতি হওয়ায় গুরুতর আহতদের চিকিৎসা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। খাদ্য ও পানি সংকটও প্রকট হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই মানবিক বিপর্যয়কে অবিলম্বে মোকাবেলার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েল গাজার উপর এই নতুন অভিযান দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়েও সংঘাত চলতে পারে, যা এক বিশাল মানবিক সংকটের জন্ম দেবে। যদিও ইসরায়েল যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছে, তবে গাজার মানুষের দুর্দশা বাড়তেই থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব সম্প্রদায় কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐক্য, আন্তর্জাতিক চাপ ও শান্তিচুক্তির সম্ভাবনার উপর। তবে এখন পর্যন্ত সংকট ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে এবং গাজার সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এম আর এম – ০৮৩১, Signalbd.com