বাংলাদেশ

রাস্তার কাজে অনিয়ম, অস্বীকার করায় এলজিইডি কর্মচারীকে গণপিটুনি

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় রাস্তার কাজের অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। অভিযোগ অস্বীকার করায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কার্যসহকারী জাহিদুল ইসলামকে বিক্ষুব্ধ জনতা গণপিটুনি দেয়। শনিবার দুপুরে উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনা

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাইঘাটা এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলছিল। দীর্ঘদিন ধরে কাজ চললেও এর মান নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে কার্পেটিং শুরু হওয়ার পর দেখা যায়, সামান্য চাপেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা শনিবার দুপুরে কাজ বন্ধ করে দেয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে যান এলজিইডির কার্যসহকারী জাহিদুল ইসলাম। কিন্তু তিনি অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করলে উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করে। পরে তিনি পাশের একটি ধানক্ষেতে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বাঁচেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ

স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, “এই রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই মান নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। পাশের আরেকটি রাস্তায় কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে, অথচ এখানে বারবার কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজে গিয়ে দেখেছি, কাজের মান খুবই নিম্নমানের। এজন্য স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।”

ইউসুফ আলী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি সামান্য চাপেই নতুন কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। মিস্ত্রিরা হাতুড়ি দিয়ে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করছিলেন। এটা দেখে আমরা হতাশ হই।”

মাসুদ রানা নামের এক যুবক বলেন, “আমাদের বাড়ির সামনে কাজ হচ্ছিল। দেখি কাদা ও ধুলোর ওপরেই কার্পেটিং চলছে। প্রতিবাদ করায় আমাকে হুমকি দেওয়া হয়।”

ঠিকাদার পক্ষের বক্তব্য

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন মিস্ত্রি আবুল কালাম স্বীকার করেন, “বৃষ্টির কারণে কিছু জায়গায় বালু ও কাদা পড়ে গিয়েছিল। তবুও কাজ শুরু করা হয়। রাস্তা পরিষ্কার না করেই কার্পেটিং করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

এমআর ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মিজানুর ইসলাম বলেন, “এটি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রকল্পের অংশ। আমি সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছি। পুরো প্রকল্পের সব বিস্তারিত এখন মনে নেই।”

এলজিইডি কর্মকর্তার প্রতিক্রিয়া

ঘটনার শিকার এলজিইডির কার্যসহকারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমাকে অফিস থেকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। গিয়ে দেখি স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি যখন বলি কোনো অনিয়ম হয়নি, তখন তারা উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারধর করে। পরে পাশের জমিতে লুকিয়ে প্রাণে বাঁচি।”

তিনি আরও বলেন, “প্রায় ১০ দিন আগে প্রাইম কোট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির পর কিছু জায়গায় বালু পড়ে গিয়েছিল। সেগুলো পরিষ্কার না করেই কার্পেটিং করায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।”

জেলার এলজিইডির বক্তব্য

পঞ্চগড় জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান জানান, “রাস্তার কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে গণপিটুনির খবর আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা পাইনি।”

পূর্বের অভিজ্ঞতা ও জনমত

এ ধরনের অনিয়ম আগে বহুবার দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের করের টাকা দিয়ে তৈরি সড়কের মান যদি নিম্নমানের হয়, তবে সেটি জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয়রা মনে করছেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ভবিষ্যৎ করণীয়

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাস্তার কাজের অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। একইসঙ্গে সড়ক নির্মাণের কাজে গাফিলতি বা নিয়ম না মানার অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয়দের আশা, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে এবং মানসম্মত রাস্তা নির্মাণ করা হয়।

এম আর এম – ০৬৫৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button