চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক রিয়াদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি

রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি অভিজাত বাসায় সাবেক এক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবির অভিযোগে শনিবার দুপুরে রিয়াদকে হাতে-নাতে আটক করে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিয়াদ দাবি করেন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিশন সদস্য এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানান কাজ করে দিতে পারবেন। এই সুযোগে তিনি অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপন খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে রিয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে আরও চারজন হলেন সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সারদার সাদাব, ইব্রাহিম হোসেন মুন্না ও কিশোর আমিনুল ইসলাম।
ফেসবুক পোস্টে রাশেদ খানের অভিযোগ
ঘটনার পর গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, রিয়াদ দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি বলেন, “পদ ব্যবহার করে নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য, মামলাবাজি, তদবির—এমন কোনো কাজ নাই যে তারা করছে না। দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে এই ধরনের ছাত্র প্রতিনিধি নামধারী লোকজন দাপট দেখাচ্ছে।”
রাশেদ খান আরও অভিযোগ করেন, এই ছাত্র প্রতিনিধিরাই নির্বাচন চায় না, কারণ নির্বাচন হলে তাদের কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসান সাংবাদিকদের জানান, “আমাদের মন্ত্রণালয়ে ছাত্র প্রতিনিধি বলে কোনো পদ নেই। আটক হওয়া ব্যক্তির নামের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। তিনি যে পরিচয় দিচ্ছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
ছাত্র সংগঠন থেকে বহিষ্কার
ঘটনার পর গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে রিয়াদ ও তার সহযোগী জানে আলম অপুকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও চাঁদাবাজির ঘটনায় তিন নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ধরনের অপরাধী কার্যকলাপে কোনোভাবেই ছাত্র সংগঠনের নাম ব্যবহার করা যাবে না।
পূর্বে রিয়াদের ভূমিকা
রাজনৈতিক মহলে রিয়াদকে ঘিরে বিতর্ক নতুন নয়। ছাত্র রাজনীতির আড়ালে প্রশাসনিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আগেও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে অনেকেই প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে, যা ভবিষ্যতে কঠোরভাবে দমন করা প্রয়োজন।
বিশ্লেষকদের মত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চাঁদাবাজি ও তদবির বাণিজ্য রোধে ছাত্র রাজনীতিকে পরিষ্কার করার সময় এসেছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব প্রভাবশালী নামধারী প্রতিনিধিদের সিস্টেম থেকে সরিয়ে দিলে ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমে যাবে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “ছাত্র রাজনীতির নামে যারা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শিক্ষাঙ্গনসহ গোটা সমাজের জন্য এর প্রভাব ভয়াবহ হবে।”
ঘটনার পরবর্তী ধাপ
আটককৃতদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও তদন্ত চলবে এবং যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, সরকার ও প্রশাসনের উচিত ভুয়া পরিচয়ে দাপট দেখানো এই ধরনের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
সারসংক্ষেপ
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এক সংসদ সদস্যের কাছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ। তিনি নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছিলেন। ঘটনার পরপরই তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় এবং এর প্রেক্ষিতে তাকে ছাত্র সংগঠন থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
গুলশানে রিয়াদের চাঁদাবাজির ঘটনাটি শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং এটি দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার একটি উদাহরণ। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার তদন্তের মাধ্যমে কতদূর এগোনো হয় এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা।
এম আর এম – ০৫৪৬, Signalbd.com