আঞ্চলিক

ডাকাতের গুলিতে হাইওয়ে পুলিশের রেকারচালকের সহকারী আহত

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এক ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতের গুলিতে আহত হয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের রেকারচালকের সহকারী তুহিন মিয়া। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, হাইওয়ে পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নড়েচড়ে বসেছে।

ঘটনাস্থল ও সময়

প্রতীকী হলেও ভয়ঙ্কর এই ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দিবাগত রাত প্রায় ৩টা ১৫ মিনিটে, মির্জাপুর উপজেলার পোস্টকামুরী চরপাড়া এলাকায়, যেটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সময় মহাসড়কে স্বাভাবিক যান চলাচল কম থাকায় ডাকাত চক্র দুঃসাহসিক তৎপরতা চালাতে সক্ষম হয়।

কীভাবে ঘটল গুলির ঘটনা?

আহত তুহিন মিয়া জানান, দুর্ঘটনার একটি খবরে সাড়া দিয়ে তিনি রেকারচালক ও পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল ইসলামের সঙ্গে মহাসড়কের নাটিয়াপাড়া এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে পোস্টকামুরী চরপাড়া এলাকায় দুটি মাইক্রোবাস আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁরা থেমে যান। মাইক্রোবাসের এক চালক জানান, তাঁদের কোনো সমস্যা নেই।

তবে সন্দেহজনক আচরণ দেখে তুহিন মিয়া ফিরে যাওয়ার সময় একটি পিস্তল দেখতে পান এক ব্যক্তির হাতে। সন্দেহ হলে তিনি সাহস করে মাইক্রোবাসের চাবি নিয়ে ফেলেন এবং অস্ত্রধারীকে আটকানোর চেষ্টা করেন। এই সময়ই একজন ডাকাত তাঁর বাঁ হাতে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়।

পুলিশ ও চিকিৎসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

হাইওয়ে পুলিশের টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতালের উপপরিচালক অনিমেষ ভৌমিক জানান:

“তুহিনের বাঁ হাতের কবজিতে গুলি লেগেছে। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। আমরা সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।”

এদিকে গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন:

“ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ডাকাতি, অস্ত্রধারণ ও হামলার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।”

মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক নেছার উদ্দিন জানান, আহত তুহিনসহ সংশ্লিষ্টরা থানায় এসেছেন, বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

ডাকাতির ধরন এবং আশঙ্কা

এই ঘটনায় একটি সুসংগঠিত ডাকাত চক্রের তৎপরতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দুইটি মাইক্রোবাস ফেলে ফাঁদ তৈরি করে, তারা ঘটনাস্থলে গাড়ি থামাতে বাধ্য করে। এ ধরণের কৌশল পেশাদার ডাকাত চক্রের ব্যবহার বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।

স্থানীয়রা বলছেন, মহাসড়কে মাঝে মাঝে রাতে এ ধরনের ফাঁদ তৈরি করে ডাকাতি হয়। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।

তুহিন মিয়া কে?

আহত তুহিন মিয়া একজন সাহসী তরুণ। তিনি মাসিক মজুরিভিত্তিতে হাইওয়ে পুলিশের রেকারচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। দুর্ঘটনার খবর পেলে দ্রুত পৌঁছানো, রাস্তা পরিষ্কার রাখা, যানবাহন সরানো ইত্যাদি কাজে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখতেন। এমন এক দায়িত্ব পালনের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তুহিন খুবই দায়িত্বশীল এবং সাহসী কর্মী ছিলেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ডাকাতের মুখোমুখি হন, যা সকলের মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি?

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দেশের অন্যতম ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এমন একটি মহাসড়কে গভীর রাতে অস্ত্রধারী ডাকাত দলের এভাবে অবস্থান এবং গুলি চালানোর ঘটনা হাইওয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন:

“রাত ২টা থেকে ৪টার মধ্যে মহাসড়কে পুলিশ টহল ও ক্লোজ সার্ভেইল্যান্স জরুরি। না হলে এ ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ বাড়বে।”

সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কে অপরাধ প্রবণতা

গত এক বছরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অন্তত ৭টি বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে দুইটি ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটে।

এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন—

  • মহাসড়কে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন পুলিশ টহল,
  • সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টলেশন,
  • থার্মাল ক্যামেরা ও ড্রোন নজরদারি।

প্রশাসনের করণীয়

এই ঘটনার পর টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন, হাইওয়ে পুলিশ বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত:

  1. ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তার
  2. রাত্রিকালীন টহল জোরদার
  3. মহাসড়কে জরুরি হেল্পলাইন স্থাপন
  4. রেকার ও জরুরি যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

আহতের পরিবারের বক্তব্য

তুহিনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁর সুচিকিৎসা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি এই সাহসিকতার যথাযথ স্বীকৃতি দাবি করছেন তাঁরা।

তাঁদের এক আত্মীয় বলেন:

“তুহিন সাহস করে যা করেছে, সেটা পুলিশ সদস্যরাও সব সময় করে না। এখন সরকার এবং পুলিশ বিভাগ যেন তাঁর পাশে থাকে।”

টাঙ্গাইলে হাইওয়ে পুলিশের রেকার সহকারী তুহিন মিয়াকে গুলি করে ডাকাতদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ডাকাতির ঘটনা নয়—এটি দেশের মহাসড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি বড় সতর্ক সংকেত। দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তার, পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করাই এখন সময়ের দাবি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button