ডাকসু নির্বাচনে পেয়েছেন একটি ভোট, সেই ভোটারকেই বিয়ে করতে চান রাকিব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র একটি ভোট পেয়েছেন ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান। আশ্চর্যের বিষয়, তিনি নিজেই নিজের পক্ষে ভোট দেননি। নির্বাচনের পর ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রাকিব জানিয়েছেন, সেই অজ্ঞাতনামা ভোটার যদি তার পরিচিত হন, তবে তিনি তাকে বিয়ে করতে চান।
এই অস্বাভাবিক এবং রসাত্মক মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে হাস্যরস হিসেবে নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন এর ভেতরে লুকিয়ে আছে তরুণ প্রজন্মের হতাশা ও ভিন্ন ধরণের প্রতিবাদ।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল
ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে একাধিক প্রার্থী লড়াই করলেও রাকিবুল হাসান ছিলেন তুলনামূলকভাবে অপ্রচলিত নাম। প্রচার-প্রচারণা তেমন না করলেও তিনি শেষ পর্যন্ত ব্যালটে জায়গা করে নিয়েছিলেন। নির্বাচনের দিন ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণা হলে দেখা যায়, তিনি পেয়েছেন মাত্র একটি ভোট।
রাকিব নিজেই জানিয়েছেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের ভোট দেননি। এমনকি পরিচিত অনেককে তাকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিতও করেছিলেন। তবুও রোকেয়া হল থেকে একটি ভোট আসে তার নামে। আর সেই ভোটকেই তিনি এখন নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অর্জন বলে মনে করছেন।
রাকিবের ফেসবুক পোস্ট
১০ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া পোস্টে রাকিব লিখেন, “আমি নিজেই নিজেকে ভোট দেইনি। যাঁরা ভোট দিতে চেয়েছিলেন, তাঁদেরও আমি নিষেধ করেছি। তারপরও রোকেয়া হলের কেউ একজন আমাকে একটা ভোট দিয়েছেন। যদি তিনি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকেন, দয়া করে ইনবক্স করুন। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।”
পোস্টটি দেওয়ার পর থেকেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করতে শুরু করে। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে হাস্যরসের ঝড় বয়ে যায়।
ডাকসু নির্বাচন ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন সবসময় শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। দীর্ঘ বিরতির পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিভিন্ন হল ও অনুষদের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। তবে বেশিরভাগ সময়েই বড় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রার্থীই আলোচনায় থাকে।
এই প্রেক্ষাপটে রাকিবুল হাসানের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও তিনি প্রতীকী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন এবং শেষ পর্যন্ত তার অর্জন হয় একটি ভোট।
প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড়
রাকিবের পোস্ট প্রকাশের পর অনেকে মন্তব্য করেছেন, এটি তার ব্যর্থতাকে হাস্যরসে রূপান্তর করার এক অসাধারণ উদাহরণ। কেউ কেউ মজার ছলে লিখেছেন, “ভোটের সংখ্যা কম হলেও প্রেমের প্রস্তাবটা বেশ সৃজনশীল।”
অন্যদিকে অনেকে বিষয়টিকে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, এটি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন। যেখানে ভোটের সংখ্যা নয়, বরং মজার ঘটনা মানুষকে বেশি আকর্ষণ করে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, রাকিবের এই পোস্ট আসলে তরুণ সমাজের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তারা বলছেন, এখনকার প্রজন্ম অনেক সময় গম্ভীর ব্যর্থতাকেও রসিকতার মাধ্যমে প্রকাশ করে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের জনপ্রিয় করে তোলে।
একজন শিক্ষা বিশ্লেষক বলেন, “এটি কেবল একটি হাস্যরসাত্মক পোস্ট নয়। এর ভেতরে আছে তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক উদাসীনতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি অনাগ্রহ। তবে ইতিবাচক দিক হলো, তারা ব্যর্থতাকেও গ্রহণ করে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে জানে।”
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে। অনেকেই রোকেয়া হলের সেই রহস্যময় ভোটারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, হয়তো তিনি নিজেই একদিন সামনে আসবেন।
ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে হালকা মেজাজে নিলেও এর ভেতরে রাজনৈতিক প্রতীকী বার্তা খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই।
ডাকসু নির্বাচনে একটি ভোট পাওয়া এবং সেই ভোটারকেই বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ—এই অদ্ভুত কিন্তু মজার ঘটনা এখন সবার আলোচনার বিষয়। যদিও এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক বা হালকা মেজাজের মন্তব্য, তবুও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ধরণের ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি রোকেয়া হলের সেই ভোটার সামনে আসবেন? আর যদি আসেন, তবে কি রাকিবের এই অদ্ভুত ইচ্ছা বাস্তবায়ন হবে? উত্তর সময়ই দেবে।
এম আর এম – ১৩২৭,Signalbd.com